‘সুপেয় পানি পান করব, সুস্থ শরীর রাখব, পৌর প্রাণ রক্ষা করুন, জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসুন, পানির দেশে পানি নাই, সুপেয় পানির ব্যবস্থা চাই। নদী-পুকুর জলাশয়-দূষণকারীদের রক্ষা নাই’-এ স্লোগান নিয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় ‘পৌর প্রাণ’ রক্ষায় পুকুর পাড়ে প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ‘ধরা’র আয়োজনে এবং পাথরঘাটা উপজেলা সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের অংশগ্রহণে রোববার (৭ এপ্রিল) পাথরঘাটা পৌর শহরের জীবন রক্ষাকারী ও প্রাণখ্যাত রিজার্ভ পুকুর পাড়ে ৫ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বরগুনা জেলা প্রশাসক ও বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় বক্তব্য দেন— পাথরঘাটা উপজেলা সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী মেহেদী শিকদার, সাংবাদিক অমল তালুকদার, সমাজকর্মী মো. নয়ন মিয়া, স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রতিষ্ঠাতা মো. ইউসুফ, সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ। এ সময় পুকুর পাড়ের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, পুকুরের পানির ওপর জীবিকার নির্ভরশীল একাধিক পানি ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, এই পুকুরের পানি প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের প্রাণের চাহিদা মিটায়। কিন্তু এখানে কিছু অসাধু লোকের কারণে পুকুরটি দীর্ঘ বছর ধরে অরক্ষিত রয়েছে পাশাপাশি অন্তত অর্ধশত পাইপ দিয়ে অবৈধভাবে পানি নেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় পুকুরের চারপাশ ভরাট করে দখল করেছে অসাধুরা।
এ বিষয় পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। মেহেদী শিকদার বলেন, পুকুরের চারপাশে গরুর মুত্রের অভাব নেই, নিরুপায় হয়ে এই নষ্ট পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ মানববন্ধনে চার দফা দাবি তুলে ধরেন, তা হলো— পুকুর খনন করা, ওয়াল নির্মাণ করা, অবৈধ উচ্ছেদ করা, মানসম্মত ফিল্টার নির্মাণ করা। তিনি বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে পাইপসহ অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে নাহলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, পৌর শহরের এই পুকুরটি হলো পাথরঘাটা পৌরবাসীর প্রাণ। পানির অপর নাম জীবন, ঠিক তেমনি এই পুকুরটি হলো আমাদের প্রাণ। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তিরা চারপাশ দখল করে রেখেছে। ওয়াল না থাকায় গরু, ছাগল চড়ায়, যাতে মলমূত্র ওই পানিতেই পরে। আবার ওই পানিই পান করছে মানুষ। তাতে পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, খাল ও পুকুর খনন প্রকল্পের আওতায় এই পুকুরটি খনন করার দাবি জানাচ্ছি পাশাপাশি ওয়াল নির্মাণ করা না হলে কখনই পুকুর সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়।
বরগুনার পাথরঘাটায় খাবার পানির তীব্র সংকট থাকে সবসময়। শুষ্ক মৌসুম এবং বৃষ্টি না হওয়ায় বেশির ভাগ পুকুর শুকিয়ে যায়। এক কলস পানি নেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন তারপরও কাঙ্ক্ষিত পানি পেতে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে।
পাথরঘাটা পৌরসভার কয়েকটি পুকুরে সামান্য পানি থাকলেও খাবার ও রান্না করার জন্য পৌরবাসীদের ভরসা এই রিজার্ভ পুকুরটি। সারা বছরই এই রিজার্ভ পুকুরের পানির ওপর ভরসা করে থাকে পাথরঘাটা পৌরসভা আবাসিক এলাকাসহ বাণিজ্যিক এলাকা।
সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরাও সকাল হলেই মোটরসাইকেলে কলস, পানির বোতল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে পানি নেয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। এ ছাড়াও রিকশা ভ্যানের মাধ্যমে পানি নেয়ার জন্য মানুষ ভিড় করছেন। রিজার্ভ পুকুরের ফিল্টের পানি নিতে প্রতিদিনই দেখা যায় প্রতিযোগিতা।
টিএইচ