সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
ঢাকা সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Post

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কমেছে লালখাতার ব্যবহার

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কমেছে লালখাতার ব্যবহার

বাংলা নববর্ষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হালখাতার সংস্কৃতি। আর হালখাতার অন্যতম অনুষঙ্গ লালখাতা। সময়ের সঙ্গে জৌলুস হারাচ্ছে হালখাতা, গুরুত্ব কমছে লালখাতারও। বাঙালির হালখাতা সংস্কৃতি হলো বাংলা সনের প্রথম দিন। হালখাতা হলো দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। বছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা খদ্দেরদের সঙ্গে বিগত বছরের খাতায় তাদের দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে  এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন।

এ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা তাদের খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করান, খদ্দেররাও তাদের সঙ্গে অনুযায়ী পুরোনো দেনা শোধ করেন। আগেকার দিনে ব্যবসায়ীরা একটি মাত্র মোটা খাতায় তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এ খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিনে নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হালনাগাদ করা থেকে ‘হালখাতা’র উদ্ভব। বাঁধাই কারিগররা লম্বা সাদা কাগজ বাঁধাই করে লাল সালু কাপড়ের মলাটে মুড়িয়ে মোটা লালখাতা তৈরি করেন। হিসাবের এই খাতার প্রতি পাতায় চারটি করে সমান ভাঁজ থাকে। বাম পাশে জমা ও ডান পাশে খরচের হিসাব। লালখাতাকে টালিখাতা নামেও ডাকা হয়। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে তাই লালখাতা তৈরির ব্যস্ততা বরিশালের বাঁধাই কারিগররা।

বরিশাল নগরীর রাখার বাবুর পুকুর পাড় ঘুরে দেখা যায়, বৃদ্ধ হাতেম শরীফ টালিখাতা বাঁধাই নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। বৈশাখের শুরুতেই বরিশাল জেলার বিভিন্ন জায়গায় টালিখাতা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। নগরীর সদর রোড সংলগ্ন অনামিলেন রোডের বুক স্টোরগুলোর ব্যবসায়ীরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে চাহিদা কমছে লালখাতার। মূলত হালখাতার সংস্কৃতি কমে যাওয়ায় লালখাতার কদরও কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা সারাবছর ধরে হালখাতা করায় এখন সারাবছরই লালখাতা কেনাবেচা হয়।

এছাড়াও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কমেছে লালখাতার ব্যবহার। বিশেষ করে বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে লালখাতার জায়গা নিয়েছে কম্পিউটার, স্মার্টফোন। অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, বরিশালে চৈত্রের শেষে হালখাতা তৈরি ও বেচাকেনা কিছু বেড়েছে। বরিশালের হালখাতার দোকান ঘরগুলোতে জবেদা, খতিয়ান, হাচ্ছিটা, চাপাটালি, বন্ডবুক ও পাকাটালি খাতা তৈরি করা হচ্ছে সল্প আকাড়ে। তবে কাগজ ও শ্রমিক মজুরি বাড়ায় এবারে দামও একটু বেশি। আধুনিক কম্পিউটারের যুগেও মানুষ যে হালখাতার ব্যবহার করছে এটাই অনেক কিছু।

তবে সরকার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় শূন্যের কোঠায় এখন জবেদা ও নগদান খাতার ব্যবহার। হালখাতার ব্যবসায়ীদের মতে দুর্নীতি দমন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হালখাতার কোন বিকল্প নেই। আর তাই যুগে যুগে অব্যাহত রয়েছে এর প্রচলন। বুনিয়াদি ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এখনো বৈশাখে চালু রেখেছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে চলছে পুরনো খাতায় চূড়ান্ত হিসেবের প্রস্তুতি। নতুন খাতায় লিপিবিদ্ধ করা হচ্ছে বকেয়ার হিসেব।

বরিশালেও বিগত ৩/৪ বছর আগের চেয়ে এবছর হাল খাতার চাহিদা রয়েছে অর্ধেক। পুরাতন যতই র্জীর্ণ হোক, তাকে নিয়েই নতুনের পথে এগিয়ে চলায় এই হালখাতা এখনো শতাব্দির সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের সমাজে। এদিকে এবছর বরিশালে বৈশাখী মেলার কোন অনুনতি দেবে না বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। উদীচী, চাদের হাট, প্লানেট ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে নগরীর বিএম স্কুল মাঠ, টিবি হাসপাতাল মাঠ ও শিশু পার্কে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকে তিনদিনের বৈশাখী মেলার আয়োজন হতো আগে।

কিন্তু সরকার পতনের পরে বিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বছর বাংলা নববর্ষে নগরীতে কোন মেলার আয়োজন করতে দেয়া হবে না। তবে যেকোন শোভাযাত্রা সফলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহায়তা করা হবে। এদিকে বরিশাল চারুকলার পক্ষ থেকে চলছে শোভাযাত্রার যৎসামান্য প্রস্তুতি। সেখান থেকে জানানো হয়েছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার শোভাযাত্রার যৎসামান্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জনতার সাড়া পাওয়া গেলে শোভাযাত্রা সীমিত পরিসরে হবে।

টিএইচ