ফরিদপুর-৩ আসনে (সদর) প্রতিপক্ষের হামলা ও হুমকিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা হতে রাত পর্যন্ত একাধিকস্থানে মোটরসাইকেলের দলবদ্ধ মহড়া দিয়ে দেখানো হচ্ছে ভয়ভীতি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণসহ দুটি ক্যাম্প ভাংচুর ও একটি ক্যাম্প তালা মেরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে মামুদপুরে হামলা করে আহত করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুই কর্মীকে। শহরের আলীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা চালানোর সময় তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। বিভিন্নস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন নির্বাচনী মিছিল বা প্রচারণা বের হলে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তাদের আশেপাশে মহড়া দিচ্ছে হেলমেট পরিহিতরা।
আ.লীগের প্রার্থী শামীম হকের লোকেরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দয়ারামপুর স্কুলের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে এ কে আজাদের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে ক্রসফায়ারে নিহত ওই এলাকার এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর ভাই কোমড় থেকে পিস্তল বের করে দুই রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। একইদিনে ঈশান গোপালপুরের ৯নং ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কাম্প ভাংচুর করা হয়। একই ইউনিয়নের লক্ষিদাশের হাটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আরেকটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করে বাঁশ-খুটি উঠিয়ে নিয়ে যায়।
ওমেদিয়া বাজারে একটি দোকানে স্থাপন করা স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি নির্বাচনী ক্যাম্প তালা মেরে বন্ধ করে সেটি আর না খোলার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। ১নং ওয়ার্ডে রাতের আধারে পোস্টার ছিড়ে ফেলার পাশাপাশি পটকা ফুটিয়ে কর্মীদের হাতে থাকা লিফলেট ছিঁড়ে ফেলেছে। ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনুর নেতৃত্বে এসব ঘটানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
এর আগে শহরের আলীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। জেলা মহিলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুসরাত রাসুল তানিয়া বলেন, আমরা ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বের হয়েছিলাম। আলীপুরের রাজ্জাকের মোড়ে আমরা উপস্থিত হলে প্রতিপক্ষ শামীম হকের সমর্থকেরা প্রায় ৩০-৪০টা মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের ঘিরে ধরে।
ওই এলাকায় এ কে আজাদের কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করতে পারবো না বলে আমাদের চলে যেতে বলে এবং এসময় আমাদের কাছে থাকা ঈগল মার্কার লিফলেট ছিনিয়ে নেয়। তারা চুমকি নামে একজন নারী নেত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
এছাড়া ফরিদপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদপুর এলাকায় এ কে আজাদের সমর্থক রনি মোল্যা ও কাইয়ুম মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। আহত রনি মোল্লাকে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
কাইয়ুম মোল্যা বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই এ কে আজাদ চাচার সমর্থক। আমার বাবা নান্নু মোল্লা এই সেন্টার কমিটির সভাপতি। আমরা ঈগল মার্কার নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। গত মঙ্গলবার আমার বড় ভাইয়ের মুদি দোকান খুলতে গেলে স্থানীয় মোস্তফার নেতৃত্বে আজাদ, আসাদ ও চুন্নু আমাকে পেছন থেকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। তারা এসময় আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যে, বলতে থাকে তোরা আর আজাদের নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারবি না। এখন থেকে নৌকার প্রচারণা করবি।
তা নাহলে তোদের মেরে ফেলবো বলে আমাকে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ভাই রনি আমাকে বাঁচাতে এলে তাকেও পিটিয়ে আহত করে। আমার ভাই রনি এখন ফরিদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার ঘটনার নেতৃত্বে থাকা মোস্তফা আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের ভাতিজা বলে জানান কাইয়ুম মোল্যা।
এদিকে, মামুদপুরে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উভয়পক্ষের দু'জন করে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে দু'টি অভিযোগ করা হয়েছে। এরমধ্যে আজাদ মোল্যার করা মামলায় মুন্নু মোল্লা (৫৫) ও রনি মোল্লা (৩৭) এবং কাইয়ুম মোল্যার মামলায় আজাদ মোল্লা (৩০) ও আসাদ মোল্লা (৩৫) নামে চারজনকে আটক করা হয়েছে।
এব্যাপারে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর অন্যতম নির্বাচনী সমন্বয়ক শোয়েবুল ইসলাম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করছি। আমরা আ.লীগের বাইরের কেউ নই। ফরিদপুর ৩ আসনে আমাদের প্রচার-প্রচারণায় যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে তাতে আমাদের সমর্থকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে কম যাবে। আমরা চাই সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি আনন্দমুখর নির্বাচনের স্বার্থে আমাদের প্রতিপক্ষ হামলা ভাংচুর বন্ধ করবে। আমরা এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে প্রশাসনেরও সুদৃষ্টি কামনা করি।
এব্যাপারে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, কোন ভাংচুর বা নির্বাচনী ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়ার মত কোন ঘটনা কোথাও ঘটেনি। এগুলো আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
এদিকে বুধবার এক নির্বাচন সভায় জেলা আ.লীগের সভাপতি শামীম হক স্বতন্ত্র প্রার্থীর এসব নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর ও হুমকির বিষয় তুলে ধরে বলেন, কি হইছে কোথায়? ফরিদপুরে এতো বড় কে আছে? আমি সরকারি দলের প্রধান, আমিওতো আইনের ঊর্ধ্বে নই।
এ বিষয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ রাতে মামুদপুর এলাকার ঘটনায় দুটি মামলার অভিযুক্ত দুই গ্রুপের চারজনকে আটক করেছে। তবে অন্য অভিযোগের ব্যাপারে লিখিত বা মৌখিকভাবে কেউ তাকে অবগত করেনি বলে জানান ওসি।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি (অপারেশন) আব্দুর গাফ্ফার বলেন, লিখিত অভিযোগ জানানো হলে সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে দু'টি অভিযোগ পেয়েছি। ওই ঘটনায় জড়িত চারজনকে আটক করা হয়েছে।
টিএইচ