প্রমত্তা পদ্মা তার যৌবন হারিয়েছে। পদ্মার বুক জুড়ে জেগে ওঠেছে বিশাল ধু-ধু বালুচর। এরকম চর জেগে উঠেছে ভেড়ামারা-পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে। প্রমত্তা পদ্মা এখন শীর্ণ ধারার নদীতে পরিণত হয়েছে।
মরণফাঁদ ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৫ টি নদ-নদী। এর প্রভাব পড়েছে কৃষি, শিল্প, পরিবেশ, বনজ ও মৎস্য সম্পদে। এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, ব্যবসা কেন্দ্র, নৌ-যোগাযোগ ব্যহত হচ্ছে। নদীর পানি অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় প্রতি বছরের ন্যায় অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠেছে পদ্মায়।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের কাছে কমছে পানি পবাহ। পদ্মাসহ শাখা প্রশাখা নদ নদীগুলো মরে যাবার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছেই। গত ত্রিশ বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পঞ্চাশ ষাট ফুট নীচে নেমে গেছে। ভর করেছে আর্সেনিক। এখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর একশো পনের ফিট নীচে অবস্থান করছে। ভূ-উপরিস্থ পানি না থাকায় পদ্মার পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পসহ পশ্চিমাঞ্চলের বহু সংখ্যক সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ছে।
খালের রুপ নিয়ে বয়ে যাচ্ছে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা। পদ্মা মরে যাওয়ার সাথে সাথে শাখা প্রশাখা নদ-নদী বড়াল, মরা বড়াল, মুছাখান, ইছামতি, ধলাই, হুড়া সাগর, চিকনাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতা কালিকুমার, হরিহর, কালিগঙ্গা, কাজল, হিসনা, সাগরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ, বেলাবতসহ পঁচিশটি নদ-নদীর অস্থিত্ব প্রায় বিলীন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। গত বছর এই সময়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ১ দশমিক ১০ লাখ কিউসেক। এ বছর রয়েছে ১ দশমিক ৬ লাখ কিউসেক।
পাকশী হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট গিয়ে দেখা যায় ব্রিজের পনেরটি পিলারের মধ্যে ৫টি পিলার বালুর চরে। বাকী সাতটির নীচ দিয়ে পানির প্রবাহ রয়েছে। ইতোমধ্যে মাঝ বরাবর চর জেগে উঠেছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালনশাহ ব্রিজের নীচে ফসলের ক্ষেত আর ড্রেজার দিয়ে বালি তোলার বিশাল কর্মকান্ড চলছে। ব্রিজের নীচে বসেছে বিভিন্ন রকমের মিনি ফাস্টফুড আর চা সিঙ্গাড়ার হোটেল।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে হলে পদ্মায় পানি লাগবে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মার পানি ধরে রাখতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের যে পরিকল্পনা ছিল সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে ব্যারেজে পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
টিএইচ