এক সময়ের প্রমত্তা গড়াই নদী ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। মিঠা পানির আঁধার গড়িয়ে বর্তমানে কোন পানির প্রবাহ নেই। কুষ্টিয়ার গড়াই নদী এখন পানি শূন্য হয়ে ধুধু বালি চরে পরিনত হয়েছে। অথচ গড়াই নদীর পানির প্রবাহ সচল রাখতে ২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের নদী খনন কাজ চলাচ্ছে সরকার।
উদ্দেশ্য হলো শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও মিলছে না সুফল। শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর উৎস মুখ তালবাড়ীয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত ৪৪ কি.মি. খনন কাজ করছে সরকার। এক যুগেরও বেশী সময় ধরে গড়াই রক্ষার এই প্রকল্প যেন মুখ থুবরে পড়েছে।
২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালে শেষ হবার কথা। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে ও কারণে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি হলেও দৃশ্যমান কোন সফলতা দেখতে পাচ্ছে না সরকার। নদীতে পানি প্রবাহতো দূরের কথা কোথাও কোথাও এক ফোঁটা পানিও নেই। দিন দিন এই নদী পরিনত হয়েছে মরা খালে। নদী পারের মানুষ এখন পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে।
জিআরসির নদী খনন নিয়ে নদী পারের সাধারণ মানুষ হাজারও অভিযোগ তুলেছে। সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, নদী খনন যদি একদিন হয় তারপর ৫দিন বন্ধ থাকে। এভাবে খনন করলে কোন সুফল পাওয়া যাবে না।
পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গড়াই নদী খননের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। গড়াই নদী না বাঁচলে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ জীব ও বৈচিত্র যেমন রক্ষা হবে না তেমনি সুন্দর বনও বাঁঁচবে না। ফলে এসবের পাশাপাশি হুমকীর মুখে পড়বে দেশ। সুন্দর বনকে টিকিয়ে রাখার জন্য লবণের যে মাত্রা প্রয়োজন সেটাকে ব্যালেন্স করে গড়াই নদী। কিন্তু দিনের পর দিন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে সুন্দরবনকে বাঁচানো যাবে কিনা তা এখন সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে।
ড্রেজার অপারেশন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ, নদী খননের অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, ৪৪% কাজ শেষ হয়েছে। এতে করে গড়াই নদীতে যে পরিমানের পানি থাকার কথা কিন্তু সে পরিমানের পানি কেন পাচ্ছি না তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, গড়াই নদীর পানির প্রবাহ সচল রাখতে পরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। নদীটাকে সচল রাখতে যতটুকু প্রয়োজন সবটুকুই করা হবে। তিনি বলেন, এই গড়াই নদী খনন একটি বড় প্রকল্প। আমরা সঠিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
এদিকে গড়াই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় খাবারের পানি তীব্র সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। পানির স্তর অধিকমাত্রায় নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলগুলো পানি তুলতে পারছে না। ফলে খাবার পানির সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। চারিদিকে পানির জন্য হাহাকার। তারপর আবার চলছে প্রচন্ড তাপদাহ।
টিএইচ