সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে ৫৩ শিক্ষকের পদ শূন্য 

ফেনী প্রতিনিধি

ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে ৫৩ শিক্ষকের পদ শূন্য 

ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে ৬৩ জন শিক্ষকের ৫৩ পদই শূন্য। মাত্র ১০ জন শিক্ষক দিয়ে কোনো রকমে পাঠদান চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, দ্রুত জনবল পদায়ন করা না হলে আইসিটিনির্ভর দেশের একমাত্র এ কম্পিউটার ইনস্টিটিউটটির শিক্ষার মান মুখ থুবড়ে পড়বে।

জানা যায়, ২০০৩ সালে ফেনী শহরতলীর রানীরহাটে ইনস্টিটিউটটির নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৬ সালে সর্বপ্রথম ডেটা টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং টেকনোলজি এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ওপর চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন শিক্ষার্থীরা। 

পরে টেলিকমিউনিকেশন টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর চাপ বেশি থাকায় এক পর্যায়ে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে তিনটি বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। 

তবে, ৬৩ শিক্ষকের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে ডাটা কমিউনিকেশনের ছয়জন ইনস্ট্রাক্টরের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ জন, ৬ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের মধ্যে একজনও কর্মরত নেই। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১২ জন ইনস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের পদ থাকলেও কর্মরত নেই একজনও। 

একই অবস্থা টেলি কমিউনিকেশনেরও। এ বিভাগে ১২ জন ইনস্ট্রাক্টর ও জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন। এছাড়া ননটেক বিষয়ের মধ্যে গণিতে ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন একজন। পদার্থ বিজ্ঞানের দুটি পদই খালি। রসায়নে কর্মরত আছেন  একজন। বাংলায় জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের দুটি পদই খালি। ইংরেজিতে দুজন ইনস্ট্রাক্টরের পদ খালি পড়ে আছে বছরের পর বছর। 

তাছাড়া আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি কলেজটিতে এখনও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহকারী ও কেয়ারটেকারের পদ সৃষ্টিই হয়নি। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি ভবনও রয়েছে। যেখানে শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ওয়ার্কশপ রুম, ল্যাবরেটরি ও কম্পিউটার ল্যাব কার্যক্রম চলে। এছাড়া প্রতিবছর প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। রয়েছে ২টি আবাসিক হলও।

কলেজটির উপাধ্যক্ষ দেবব্রত বলেন, ইনস্ট্রিটিউটে সমস্যার অন্ত নেই। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটের পাশাপাশি কলেজটিতে গভীর নলকূপ না থাকায় সংকট রয়েছে সুপেয় পানিরও।

তিনি আরও বলেন, কলেজের সামনে দিয়েই গেছে ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়ক। এ সড়কে কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাতায়াত করে। কলেজের সামনে যাত্রী ছাউনি না থাকায় বৃষ্টি ও রোদে দীর্ঘক্ষণ পরিবহনের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। তাছাড়া কলেজটিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো খেলাধুলার মাঠ। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ক্রীড়াবিমুখতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে ২০১২ সালে শুরু হওয়া স্কিলস ফর ইমপ্লিমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রজেক্টটি ২০১৯ সালে শেষ হলে ১৫ শিক্ষককে কলেজে সংযুক্ত করা হয়। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত তাদের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এরপর গতবছর পর্যন্ত ৪০ মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে না। কলেজ থেকে যে টাকা তাদের দেয়া হয়, তাতে যাতায়াত ভাতাও হচ্ছে না।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কলেজটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশের আইসিটি শিক্ষার নির্ভরযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু নানা অবহেলার মধ্যে থাকায় দিন দিন বিশেষত্ব হারাচ্ছে। তবে এত সংকটের মাঝেও প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ৭জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। 

এছাড়া দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ৪ জন কর্মচারী কাজ করছেন। এক শিফটের শিক্ষক দিয়ে দুই শিফট চালানো হচ্ছে। ফলে যতদ্রুত সম্ভব সম্মাপ্ত প্রকল্পের ১৫ শিক্ষকের বেতন-ভাতা চালু করে শূন্যপদে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদায়ন এবং সিভিল ও ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি চালু করা দরকার।

টিএইচ