১৯৮৩ সালে ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’- এ স্লোগানকে সামনে নিয়ে নরসিংদী উপ-কারাগারে কার্যক্রম চালু করেন সরকার। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে এটি নরসিংদী জেলা কারাগারে উন্নীত হয়। বর্তমানে কারাগারটি বন্দিদের সংশোধনাগার হিসাবে বাস্তবে রূপ দিতে নরসিংদী জেলা কারাগারে ভেতরে-বাইরে কর্মকর্তা কর্মচারীরা একাগ্রচিত্তে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
জেলার, ডেপুটি জেলার, সুবেদার,প্রধান কারারক্ষীসহ সকল কারারক্ষীরা বন্দিদের সাথে আন্তরিক সেবা ও ভালো ব্যবহার দিয়ে নজির সৃষ্টি স্থাপনের চেষ্ঠা করছেন। কারাগারের স্বার্থরক্ষায় তারা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন । সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খুশি কারাবন্দিরা। কারা অভ্যন্তরে বেড়েছে সেবার মান।
সবমিলিয়ে বদলে যাচ্ছে নরসিংদী জেলা কারাগারের চিত্র। নরসিংদী জেলা কারাগারের সার্বিক চিত্র নিয়ে ডেইলি পোস্টের নরসিংদী প্রতিনিধি তারেক পাঠানের সাথে কথা বলেছেন জেল সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ। পাঠকদের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হল।
জেল সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে তিনি নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি শেরপুর ও সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জেল সুপার বলেন, তিনি যোগদান পর থেকে কারা অধিদপ্তরের বিধি- বিধান অনুসরণ করে এই কারাগারটি পরিচালিত হচ্ছে। কারাগারে শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষায়, কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের খাবারের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি বন্দিদের মৌলিক চাহিদাগুলো পৌঁছে দিতে সার্বক্ষণিক তদারকিসহ একাগ্রচিত্তে কাজ করছেন কারাগারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তিনি জানান, কারাগারে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন। নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন তারা। কারাগারে প্রত্যেক বন্দিদের সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কারাগারে মাদকের প্রবেশ যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি। সততায় অবিচল থেকে এই কারাগারটিকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত কারাগারে রূপান্তরে কাজ করছি।
কারাবন্দিরা সমাজ ও দেশের বোঝা নয়, কারামুক্ত হলেই তারা হবেন পরিবার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ফেলে আসা অতীতের সব উচ্ছৃঙ্খল পথ ছেড়ে অলোর পথে ফিরিয়ে আনতে এসব হাজতি-কয়েদিদের কারা অভ্যন্তরে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে লাইব্রেরিয়ান সুবিধা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বিনোদন, প্রশিক্ষণ -গণশিক্ষা, ওকালতনামা স্বাক্ষর, ভালো আচরণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা, বন্দিদের কল্যাণমূলক সংশোধন কার্যক্রম, বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ জনহিতকর নানা ধরনের মোটিভেশন।
বন্দি সমস্যা নিরসনে জেল সুপার জানান, কারাগারটিতে ৩৪৪ জন বন্দি থাকার ব্যবস্থা থাকলে ও বিভিন্ন মামলায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি রয়েছে। তাই অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবে নব র্নির্মিত ঢাকা সিলেট মহাসড়কের বড়ইতলা সংলগ্ন উত্তর কারাচর এলাকায় ১ হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন জেলা কারাগারটির কাজ শেষের পথে। দ্রুত উদ্বোধন হলে এটি স্থানান্তর ও এ সমস্যা নিরসন হবে।
নরসিংদী জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, মো. আবুল কালাম আজাদ জেল সুপারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জেলা কারাগারকে ব্যতিক্রমর্ধমী কারাগারে রূপান্তরে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায় সময়ই তিনি কারাগারের ওয়ার্ড পরিদর্শন করছেন। কারাগারে বন্দিদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। করছেন মনিটরিং ।
শুধু তাই নয়, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত কারাগার রূপান্তরের লক্ষ্যে কারারক্ষি ও মহিলা কারারক্ষিদের নিয়ে নিয়মিত মাসিক দরবার করছেন জেল সুপার। মাদক সিন্ডিকেট যেন কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড করতে না পারে সেজন্য কারারক্ষীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ ।
টিএইচ