মানিকগঞ্জের শিবালয়ে আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে গাড়ি পারাপারে চলছে রমরমা টিকিট বাণিজ্য। ফেরিতে উঠতে হলে স্থানীয় দালালদের দিতে হয় টাকা। তারা টাকা নিয়ে পেছনের গাড়িকে আগে ওঠার ব্যবস্থা করে দেয়। চালকদের অভিযোগ, বিআইডাব্লিউটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই সক্রিয় এ দালাল চক্র।
সরেজমিনে আরিচা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কাজীরহাটের উদ্দেশ্যে আসা বেশ কিছু পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের বিআইডাব্লিউটিসির কাউন্টার টিকিট বিক্রেতার সামনে উপচে পড়া ভিড়। ঘাটে গাড়ির চাপ একটু বেশি হওয়ায় ৪-৫ জনের কয়েকটি গ্রুপ বিভিন্ন গাড়ির চালকদের সঙ্গে ফেরিতে আগে উঠানো নিয়ে দামাদামী করছেন।
এ সময় দালালরা প্রতিটি গাড়ি থেকে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে সিরিয়ালে পেছনে থাকা গাড়ি ভিন্ন পথে ঘুরিয়ে ফেরির সামনে পৌঁছে দেয়। সিরিয়াল অমান্য করে পেছন থেকে সামনে আসা গাড়ির টিকিটও দিতে দেখা গেছে। ফেরির সামনে থেকে অথবা ফেরিতে উঠার পর বিআইডাব্লিউটিসির টিকিট কাটে। প্রতিটি গাড়ি থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়। যদি অতিরিক্ত টাকা না দিতে চায় তাহলে ট্রাকচালকদের নানা ভাবে হয়রানি করা হয়।
চালকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিনিয়তই আমাদের আরিচা হতে কাজীরহাটে যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে হয়। আর এ সময় অতিরিক্ত টাকা ছাড়া মেলে না ট্রাকের টিকিট। আরিচা ঘাট হতে কাজীরহাট যাওয়া পর্যন্ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। টিকিট কাটতে, ফেরিতে উঠতে, ফেরি থেকে নামতে গেলেও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
বিআইডাব্লিউটিসির কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনা কাজীরহাট ফেরি পাড়াপারে বড় ট্রাকের ভাড়া ২৬৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের ভাড়া ২০৪০ টাকা, ছোট ট্রাকের ভাড়া ১৫৫০ টাকা, অ্যাম্বুলেন্স-মাইক্রো ভাড়া ১৪৫০ টাকা, প্রাইভেট কারের ভাড়া ১৩০০ টাকা, পিকআপ ১০২০ টাকা, মোটরসাইকেলের ভাড়া ১৫০ টাকা।
প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা না নিলেও ছোট বড় সব ধরণের ট্রাকের টিকিট কাটতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় চালকদের। টিকিট নেয়ার সময় ট্রাক চালকদের কাছ থেকে গাড়ি প্রতি ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকারও বেশি নেয়া হয়।
আর এসব অতিরিক্ত টাকা নেয় বিআইডাব্লিউটিসির আরিচা শাখার টিকিট কাউন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অতিরিক্ত টাকা না দিলে টিকিট পেতে নানা ধরণের হয়রানি হতে হয় ট্রাক চালকদের।
ফেরি পাড়ের অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালক রমজান আলী বলেন, ফেরির টিকিট কাটতে গিয়ে আমাদের বেশি টাকা দিতে হয়। আবার আগে উঠতে হলেও দালালদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ফেরিতে উঠতে হয়। দালালদের টাকা না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের বসিয়ে রাখে, তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দেই।
সিরিয়াল অমান্য করে পেছন থেকে সামনে আসা ট্রাকচালক মো. লুৎফর বলেন, ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার চেয়ে ৩০০-৪০০ টাকা দিয়ে আগে যাওয়া অনেক ভাল। এখানে বসে থাকলেও তো অনেক টাকা খরচ হয়। তার চেয়েও ভালো দালালদের ৩০০-৪০০ টাকা দিয়ে অন্যপথ দিয়ে ঘুরে সামনে এসেছি।
আরেক চালক মো. আরমান হোসেন বলেন, আমার বড় গাড়ি। আমার গাড়ির টিকেটের দাম ২৬৫০ টাকা হলেও কাউন্টার থেকে ৩০০০ টাকা নিয়েছে। অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাউন্টারের লোকজন ফেরির টিকিট দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে বেশি টাকায় টিকিট নিয়েছি।
সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা জানতে চাইলে, বিআইডাব্লিউটিসির আরিচা শাখার ট্রার্মিনাল এসিস্ট্যান্ট (টিএ) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সব গাড়ি থেকে নেয়া হয় না। দু-একটি গাড়ির স্টাফ খুশি হয়ে চা-নাস্তা খরচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ডিউটি চলাকালীন আরও দুই কর্মকর্তা মো. আলামীন ও হেলাল উদ্দিন ছিলেন। মো. আলামীন নিউজ না করার জন্য বিভিন্নভাবে ম্যানেজের চেষ্টা চালায়।
এ বিষয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটের ম্যানেজার মো. আবু আব্দুল্লাহ রনি বলেন, কোনো কর্মকর্তা যদি অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিসির আরিচা আঞ্চলিক ঘাট শাখার ডিজিএম নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কিছুই বলতে পারব না। তিনি আরও বলেন, আমাদের মোবাইল নম্বর কাইন্টারে দেয়া আছে কোন ড্রাইভার তো অভিযোগ করেনি, আপনি অভিযোগ করেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আপনাকে জানাবো।
টিএইচ