বরিশাল শহরে আড়াই লাখের বেশি ফার্মের হাঁস ও বয়লার মুরগির ডিম মজুদ করার অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা আদায় করার পরেও এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বরিশালের খুচরা-পাইকারী ডিমের বাজার। গত বুধবার শহরের হাটখোলা খান কোল্ড স্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করে ৬ পাইকারী ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়।
অনৈতিক উদ্দেশ্যে ডিম মজুদের বিষয়ে সত্যতা মিললে তাদের সতর্ক করে ৫ হজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি লাইসেন্স না থাকায় খান কোল্ড স্টোরেজের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপশি তাদের ৭ দিনের মধ্যে সব হাঁসের ডিম ও তিনদিনের মধ্যে সব মুরগির ডিম বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়ে আসা হয়। এমন অভিযানের প্রভাবে শহরে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এর চিত্র পুরো উল্টো।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (৫ জুলাই) শহরের পাইকারি ডিমের বাজার থমথমে অবস্থায় থাকলেও খুচরা ডিমের বাজার ছিল অস্থির। দাম কমে যাওয়া তো দুরের কথা, অভিযানের নাম ভাঙিয়ে সংকট দেখিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলোসহ অলিগলি পাড়া মহল্লার মুদি দোকানে শুক্রবার (৫ জুলাই) ও চড়া মূল্যে ডিম বিক্রি করতে দেখা গেছে খুচরা বিক্রেতাদের।
কোন কোন জায়গায় ডিমের হালি ৫০ টাকা আবার কোথাও বিক্রি করতে দেখা গেছে আগের ন্যায় ৬০ টাকা দরে। তবে ৫০ টাকার কমে কোন এলাকায় ডিম মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। পোর্ট রোড এলাকার খুচরা ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা ও সতর্কতায় আড়াই লাখ ডিম মজুদ হয়নি ঠিকই তবে শহরের প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা প্রচুর। এই আড়াই লাখ ডিম শহরে এক থেকে দুইদিনের যোগান হতে পারে সর্বোচ্চ। তাই দাম কমে যাওয়ার সঙ্গে এর কোন সম্পর্কই নেই।
পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামেই ডিম কিনতে হচ্ছে এখনো। সুতরাং কম দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। তারা আরো বলেন, যে সকল ব্যবসায়ীদের বিক্রি বেশি তারা সবাই স্থানীয় পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকা থেকেই ডিম আনেন। বরিশালের ব্যবসায়ীদের দাম কমানো বাড়ানোর কোন ক্ষমতাই নেই বলে দাবি তাদের। ঢাকা থেকে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয় সেই মূল্য তালিকা মেনেই তাদের ডিম কেনাবেচা করতে হয়।
কিন্তু বরিশালের বিভিন্ন এলাকার পোল্ট্রি ফার্ম থেকে যারা ডিম সংগ্রহ করে থাকে তারা চাইলে কিছুটা মূল্য কমিয়ে রাখতে পারেন। এজন্যই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা পর্যন্ত ডিম বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, ঢাকা থেকে যদি ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে কোনভাবেই দাম কমিয়ে রাখতে পারবেন না তারা। বর্তমান অবস্থায় তারা কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করতেন। কেনা যদি বেশি টাকায় হয় তাহলে কম দামে বিক্রির কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে জেল-জরিমানা করলেও কিছু করার নেই।
অন্যদিকে ডিম মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযানের খবরে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে হয়তো কম মূল্যে ডিম কিনতে পারবেন এমন আশা নিয়ে বাজারে আসা ক্রেতাদের দেখা গেছে হতাশ হয়ে ফিরতে। গত বৃহস্পতিবার অভিযানের খবরে শহরের ডিমের বাজারে কি অবস্থা তা জানতে যাওয়া হয় বড়বাজার, চৌমাথা বাজার, নতুল্লাবাদ বাজার, বাংলাবাজার, পোর্ট রোড বাজার, সাগরদী বাজারসহ শহরের বিভিন্ন বাজারে।
তানিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, সমাজে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের দৈনন্দিন প্রোটিনের একটি বড় উৎস হচ্ছে ডিম। মাছ-মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলতে পারলেও প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ডিম অপরিহার্য প্রায় সকল শ্রেণির মানুষের। তাই দাম বাড়লেও কিছুই করার থাকেনা। ব্রয়লার মুরগির যে ডিম এক সময় ফ্রিতে দিলেও মানুষ কিনতে চাইতো না সেই ডিম এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা হালি। দেশি মুরগি বা হাঁসের ডিমের কথা তো ভুলেই গেছেন তিনি।
বাজারের পাশের এক মুদি দোকান থেকে ২ হালি ডিম কিনেছেন ১০৫ টাকায়। এই ডিম শহরের অলিগলির বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা হালি দরে। অনিয়ন্ত্রিত ডিমের বাজারে এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের আসলে অভিযোগ বা আক্ষেপ করা ছাড়া কিছুই করার নেই বলে দুঃখ প্রকাশ করেন একাধিক ক্রেতা। এছাড়া নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা উচিত বলে দাবি জানান তারা।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ী, মজুদদার এবং অনৈতিক উপায়ে ব্যবসা পরিচালনাকারীদের দমনে তারা সব সময়ই সক্রিয় রয়েছেন। এমন অভিযান নিয়মিতই পরিচালনা করা হবে। এছাড়া অতিমুনাফা ভোগ এবং মজুদ করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং চলছে বলেও নিশ্চিৎ করেছে সূত্রটি।
টিএইচ