চলতি বছরের গত ৫ এপ্রিল বরিশালে ছিলো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.০ ডিগ্রি। তবে বুধবার (৯ এপ্রিল) ৩৪.৭ ডিগ্রিতে আসলে কয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা স্বরূপে ফিরেবে কাঠফাটা রোদের চৈত্র! তাপদাহের সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনদুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে পড়ছে। তীব্র গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে।
বাতাসে আর্দ্রতার হার অর্থাৎ জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় তাপদাহের সঙ্গে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়ায় নাকাল অবস্থা। কাহিল হয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষগুলো। আর এই চৈত্রের কাঠফাটা রোদ তাপপ্রবাহের সঙ্গে বরিশালে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা।
তবে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বরিশালের হাসপাতালগুলো। বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে এবং এপ্রিলের শুরুতে গত ১৫ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩৩৪ রোগী ভর্তি হয়েছে। আর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩২২ জন। বর্তমানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী মধ্যে বেশি ভাগই হলো নারী।
বুধবার (৯ এপ্রিল) হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে শতাধিকের মত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্যদিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের ডায়রিয়া রোগীরা বহিঃবিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে শতাধিকর মত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে ৫০-৬০ জন রোগী। ভর্তি হচ্ছে ২০-২৫ জনের মত রোগী। এমনটাই জানিয়েছেন সেখানের চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- ১০০ শয্যা হাসপাতালে ডায়রিরা রোগী জন্য একটি আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। সেখানে সরকারিভাবে মাত্র ৪টি বেড রয়েছে। কিন্তু রোগী বেশি থাকার কারণে মেঝেতে রাখা হচ্ছে। তবে রোগীদের অভিযোগ পর্যাপ্ত বেড না থাকায় সেবা নিতে হচ্ছে মেঝেতে। তাই প্রায় সময়ই রোগী সামলাতে দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা।
একাধিক রোগীর অভিযোগ হাসপাতালের মেঝে থেকে শুরু করে হাঁটার পথ, বারান্দা সবখানেই অস্থায়ী বিছানা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মশা-মাছি এবং নোংরা পরিবেশের কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও স্বজনদের।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা জানায়, খাওয়ার পরে প্রথমে পেটে ব্যথা অনুভব করে। পাশাপাশি বমি ও পরে ডায়রিয়া শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অনেকেই বলছে হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় মাথা ঘোরানো, পেটে ব্যথা অনুভব করে প্রথমে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছেন। এতে কাজ না হওয়ায় তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। তবে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাও কম নয়। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতার কারণেও এমনটা হতে পারে বলে ধারণা চিকিৎসকদের। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ শিল্পি রানী নাথ জানান, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী কিছুটা বেড়েছে।
তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫ জনের মত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আমরা সবাইকে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্যালাইন ও ওষুধ পর্যাপ্ত রয়েছে। আশা করি সংকট পড়বে না এবছর। সামনে গরমের তীব্রতা বাড়লে রোগীর চাপ বাড়বে। তখন একটু চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, রোগীরা যদি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে তবে এ রোগ হতে পারে। সবাই এ বিষয় সচেতন থাকলে ডায়রিয়া রোধ করা সম্ভব। যেহেতু এটি পানিবাহিত রোগ সেহেতু সবাইকে পরিষ্কার পানি পান করা জরুরি। বর্তমানে হাসপাতালে যারা আসছে আমরা তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করছি।
তিনি আরও বলেন, চলতি ডায়রিয়া প্রকোপে আমাদের এখানে গড়ে ২৫ জনের মত রোগী প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন অর্ধশতাধিকের মত রোগী। আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন মজুদ আছে। তবে বেড না থাকায় সমস্যা একটু সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে গত বছরের মত চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সামনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা চিকিৎসকদের।
টিএইচ