কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় চলছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন। এতে বিলীন হচ্ছে উপজেলার ফসলি জমিও আশেপাশের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক অবৈধ ড্রেজার দিয়ে প্রতিনিয়ত কৃষি জমি, পুকুর, বাড়ির আঙ্গিনা থেকে মাটি উত্তোলন করছে স্থানীয় একশ্রেণির অসাধু চক্র।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক জমির মালিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর বার বার অভিযোগ করেও নিরুপায় হয়ে তারা এখন ড্রেজার ব্যবসায়ী চক্রের কাছে জিম্মি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে পাইপ ধ্বংস করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন জব্দ করে নিয়ে আসে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই আবারো সেখানে বসানো হয় অবৈধ নতুন ড্রেজার মেশিন। ফলে স্থানীয়দের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন অভিযান কি তাহলে শুধুই লোক দেখানো?
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুড়িচং উপজেলার হরিপুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে বিনা বাঁধায় চালাচ্ছে অবৈধ ড্রেজার। দেখা যায়, একটি ডেজার মেশিনে দুটি পাইপ লাগানো। একটি যাচ্ছে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে আর অন্য পাইপে সে মাটি বিক্রি করছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি দিলে একদিনের বেশি লাগার কথা না কিন্তু এ ড্রেজার মেশিনটি এখানে চলছে প্রায় দু মাস। মাটি কাটা ফিশারির চারপাশে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, ও চলাচলের রাস্তা। ডেজার দিয়ে মাটি কাটায় হুমকির মুখে ফসলি জমি, বসত বাড়ি, ও চলাচলের রাস্তাঘাট। বক্তব্যের জন্য ফোন দিলে উঠে আসে কথিত কিছু সাংবাদিকের নাম। যাদের সহযোগিতায় মেনেজ করা হয় অনেক কিছু।
বুড়িচং উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, ড্রেজার বসিয়ে গভীরভাবে মাটি কাটার কারণে আমাদের ফসলি জমি ড্রেজিং গর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কেউ যদি ইচ্ছা করে জমি দিতে না চায়, তাহলে সেখান থেকে জোরপূর্বক মাটি কাটা শুরু করে শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের নিকট কমমূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সাধারণ কৃষক।
ড্রেজার সিন্ডিকেটরা জমির মালিকদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখে এবং রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাংগায়। ফলে তাদের ভয়ে কেউ কোন অভিযোগ করে না। আর যদিও কেউ অভিযোগ করে প্রশাসনের লোকজন আসার আগেই তারা টের পেয়ে যায় এবং মেশিনসহ যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলে। পরক্ষণে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে তারা আবার মাটি কাটার উৎসবে মেতে ওঠে। গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট তাদের দুঃখের কথা বলতে গিয়ে অনেক কৃষক কান্নায় ভেঙে পড়েন।
হরিপুরের ড্রেজার মালিক রিমন বলেন, এই মাটি সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য কেনা হয়েছে। ইউএনও স্যার নিজে অনুমতি দিয়েছে। এসময় এখানকার একজন শ্রমিকও বলে ইউএনও স্যার নিজে এখানে এসে দেখে গেছে।
একাধিক ড্রেজার মালিক বলেন, সবাই মনে করে আমরা ড্রেজার চালাইয়া কত টাকা জানি কামাইতাছি। আসলে এক সময় ঠিকই কামাইতে পারতাম। তখন কাউকে টাকা দিতে হইতো না। এখন ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপ লাগানোর সাথে সাথে প্রশাসন, নেতা, সাংবাদিক সবাই এসে হাজির হয়ে যায়।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার বলেন, কোথায় কোথায় ড্রেজার চলে আমাকে লোকেশন দিন আমি ব্যবস্থা নেবো।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য ড্রেজারের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অনুমতি দিয়েছিলাম কিন্তু সেটা এখন পর্যন্ত চলমান থাকার কথা না। ঠিক আছে আমি বিষয়টি দেখছি।
টিএইচ