সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

বৃষ্টি না হলে আমাদের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে 

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

বৃষ্টি না হলে আমাদের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে 

কেরানীগঞ্জে ক্রমাগত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে ফসলি জমির ফসল পুড়ে যাচ্ছে। জমিতে সেচ দিয়েও কৃষকরা তাদের ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। করল্লা, শসা, লালশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, বেগুন, পটল, লাউ, ঝিঙ্গে,  কচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। কেরানীগঞ্জে টানা প্রায় এক মাস ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। যার কারণে বিপর্যয় ক্রমশই বাড়ছে।

তীব্র গরম ও তাপদাহে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের সবজি ক্ষেত। সবজি নষ্ট হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের কৃষকরা। কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের কৃষক হারুন উদ্দিন ৪০ শতক জমিতে পটোল আবাদ করেন। তবে তীব্র গরম ও তাপদাহে পটোল ক্ষেত পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছে পটোল আসার পরেই তীব্র গরম ও তাপমাত্রার কারণে পটোলসহ গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। পুরো ক্ষেতের একই অবস্থা। তবে গত কয়েকদিনের টানা তাপদাহে মৌসুমী সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। 

কৃষি অফিস বলছেন, ফসল রক্ষায় কৃষকদের সচেতন করছেন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা। কেরানীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর ও রোহিতপুর ইউনিয়ন কৃষি মাঠগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, মাচায় মাচায় ঝুলছে লাউ, পটোল, শসা ও করলা। কোথাও আবার বেগুন, টমেটো, কাঁকরোল, লাল, পুই ও পালঙশাকসহ নানা রকমের নতুন নতুন সবজি ক্ষেত। এমন সবুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখানে হরহামেশাই চোখে পড়েছে। তবে সবজি ক্ষেতগুলোতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। 

এসব মাঠে কৃষকরা গ্রীষ্মকালিন সবজির পাশাপাশি পাট, ভুট্টা, সবজির মধ্যে কইডা, চিচিঙ্গা, করলা, কচু, ঢেঁড়স, ডাটা, পুঁইশাক আবাদ বেশি করেছেন। পানির অভাবে অনেক কচুর জমি শুকিয়ে গেছে। যার ফলে কচু গাছগুলোর পাতা শুকিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। অধিক তাপে ভুট্টা গাছগুলো খুব দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার কলাতিয়া এলাকার বাসিন্দা আতর আলী বলেন, তার প্রায় বিশ শতাংশ জমিতে করলা আবাদ করেছেন। টানা কয়েকদিনের গরমে করলা ঝরে পড়েছে এবং গাছের পাতাগুলো মরে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী বেলনা গ্রামের কৃষক জলিল উদ্দীন বলেন, উন্নত বীজ ব্যবহার করে একাধিক জমিতে কইডা, চিচিঙ্গা ও করলা আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত সবজির জমিগুলো মোটামুটি ভালো আছে। তবে আরও গরম পড়েছে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

একই গ্রামের কৃষক মোড়ল হক বলেন, তিনি তার জমিতে এ বছর কইডা, চিচিঙ্গা ও করলা আবাদ করেছেন। অতি গরমে জমিতে পানি না দিতে পারায় ফুল হলেও ফল হচ্ছে না। ফুলগুলো ঝরে যাচ্ছে। আরেক কৃষক উজ্জল বলেন, রোদের তাপে পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, করলা গাছের ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে এবং ফসল বাড়ছে না। ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আম, কাঁঠাল ও লিচুর গুটি শুকিয়ে ঝড়ে পড়ছে।

হযরতপুর পূর্ব ঢালীকান্দি গ্রামের কৃষক আয়নাল হোসেন জানান, দুই মাস আগে ৪০ শতক জমিতে শসার আবাদ করেন। আবাদ করতে তার প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। শসার ফলন ভালো হয়েছিল। কচি শসা গাছের ধরার পরই তীব্র গরম ও তাপদাহে শসাক্ষেত পুড়ে যাওয়ার মতো হয়ে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কচি শসা আর বড় হতে পারেনি। এখন ক্ষেত থেকে শসা তুলতে পারবে এমন অবস্থা নেই। 

এদিকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হিমেল সরকার জানান, তীব্র গরমে কিছু কিছু সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে কি পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, বিষযটি জানাতে পারেননি তিনি। উপজেলা কৃষি অফিসার মহুয়া শারমিন মুনমুন বলেন, টানা কয়েকদিনের তাপদাহে সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। 

বৃষ্টি না থাকায় এবং জমিতে পানি না দেয়ার কারণে সবজির ক্ষতি হতে পারে। তবে গ্রীষ্মকালীন সবজি পটল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, করলা ছাড়াও মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল ও লিচু ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাপ প্রবাহের কারণে স্প্রে মেশিন দিয়ে ফল গাছে পানি দেয়ার পাশাপাশি গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে

টিএইচ