নাটোরের বড়াইগ্রামে সরকারিভাবে খনন করা নদীর মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। গত দুই সপ্তাহ যাবৎ বড়াল নদীর নটাবাড়িয়া অংশে প্রকাশ্যে শত শত ট্রাক্টর মাটি বিক্রি হলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
এভাবে নদীর মাটি বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, ২০২১ সালে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বড়াল নদী খনন করা হয়। সে সময় নদীর দুই পাড়সহ পার্শ্ববর্তী ব্যক্তি মালিকানা জমি মিলিয়ে প্রায় ২০ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট উঁচু করে খননের মাটিগুলো রাখা হয়।
এরপর জমির মালিকরা উঁচু মাটির উপরেই কলাবাগানসহ বিভিন্ন গাছপালা রোপণ করেন। নিয়মানুযায়ী এসব মাটি কোন ব্যক্তি বিক্রির সুযোগ না থাকলেও স্থানীয় আ.লীগ নেতাসহ প্রভাবশালীরা এসব মাটি গাড়ি প্রতি ১০০০-১৩০০ টাকা দামে বিক্রি করছেন।
প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত দুটি এক্সকেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে এসব মাটি কেটে প্রায় ২০টি ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি রাতে কমপক্ষে ২০০-২২৫ গাড়ি মাটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এভাবে মাটি বিক্রি করে এ চক্রটি একদিনে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
একই সঙ্গে মাটি বোঝাই শত শত ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তাঘাটও নষ্ট হচ্ছে। সারারাত ভেকু ও ট্রাক্টরের চলাচলের শব্দে স্থানীয়দের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মাটি কাটার আগে তারা স্থানীয় কৃষকদের রোপণ করা ফলবান কলাগাছসহ অন্য গাছপালা নির্বিচারে কেটে ফেলায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায় দুটি এক্সকেভেটর মেশিন দাঁড় করানো। অন্ধকার নেমে এলেই তারা মাটি কাটা শুরু করবেন। ইতোমধ্যে মাটিখেকোরা বড়াল নদীর ব্রিজ থেকে জোয়াড়ী বাজারের দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকার মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এ সময় সেখানে মাটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়েই আমরা মাটি বিক্রি করছি। তবে নদী খননের মাটি বিক্রি করার এখতিয়ার উনাদের আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
তিরাইল গ্রামের সোহেল রানা ও শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা প্রতি গাড়ি মাটি ১২শ টাকা দরে কিনে নিয়েছি।
মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত এক্সকেভেটর মালিক পরিচয় দেয়া উপজেলার চকপাড়া গ্রামের বাবু জানান, সবার পারমিশন নিয়েই মাটি কাটা হচ্ছে। বিষয়টি সবাই জানে। এ সময় তিনি নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করে এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বোরহান উদ্দিন মিঠু জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আর নদী খননের মাটি কোন ব্যক্তিকে বিক্রির অনুমতি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমি খোঁজ নেয়াসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
টিএইচ