সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ করে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারের দাবি

দিনাজপুর প্রতিনিধি

ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ করে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারের দাবি

দেশের উত্তর অঞ্চলের দিনাজপুরের একমাত্র গ্রানাইট পাথর খনি মধ্যপাড়ায়। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ভারত থেকে চড়া দামে পাথর আমদানি বন্ধ করে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। 

লাভবান হবে সরকার ও ঠিকাদার। দেশের বড়বড় মেগা প্রকল্পে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করলে মজবুত ও টেকসই হবে। যা হাজার বছরেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনিতে খনির ইয়ার্ডে বিপুল পরিমাণ পাথরের মজুদ থাকলেও বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। 

অর্থনৈতিক কারণে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রি কমে গেছে। এ কারণে খনি কর্তৃপক্ষ অর্থসংকটে পড়েছে। ঋণ করে ঠিকাদারের বিল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

মধ্যপাড়া খনি ইয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন পাথর মজুদ আছে। এর মধ্যে ৫ লাখ ২৫ হাজার টন ব্লাস্ট পাথর রেলপথে ব্যবহূত হওয়ার জন্য এবং ২ লাখ ২২ হাজার টন বোল্ডার নদী শাসনের কাজে ব্যবহূত হওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ইয়ার্ডে। মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রি কমে যাওয়ার ফলে খনি কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। দ্রুত এসব পাথর বিক্রি না হলে খনির উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ মধ্যপাড়া খনি থেকে উৎপাদিত পাথরের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করা হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), যুক্তরাজ্যের কিউইডি স্বাধীন টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেড, এবং সিঙ্গাপুরের অ্যাডমেটেরিয়ালস টেকনোলজিস পিটিই লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানিকৃত পাথরের তুলনায় মধ্যপাড়া খনি থেকে উৎপাদিত পাথরের গুণমান অনেক উন্নত যা পৃথিবীর অন্য কোথায় নেই।

দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ টন হলেও এর সিংহভাগ আমদানি করা হয় ভারত ও ভুটান থেকে। আন্তর্জাতিক মানের এবং কম দামে পাথর থাকা সত্ত্বেও, নানা কারণে পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যপাড়া পাথর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য দরপত্রের দরে মধ্যপাড়া পাথরের ব্যবহারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা পালন করা হচ্ছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারের জন্য তাগাদা দিলে খনির পাথর বিক্রির চাহিদা বেড়ে যেতে পারে। এজন্য সরকারের উচিত খনিটির প্রতি নজর দেয়া। 

এ বিষয়ে খনির কর্মকর্তারা জানান, আমদানি পাথরের উপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু বৃদ্ধি প্রয়োজন। তারা মনে করেন, এতে পাথরের বিক্রিতে সুবিধা হবে এবং দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনিটিকেও বাঁচিয়ে রাখা যাবে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ৫-২০ (৩-৪) মিমি, ২০-৪০ মিমি, ৪০-৬০ মিমি (ব্লাস্ট), ৬০-৮০ মিমি ও বোল্ডার্ত এই ৫টি সাইজে পাথর উৎপাদিত হচ্ছে। তবে রেলপথে ব্যবহূত ৫ লাখ ২৫ হাজার টন ব্লাস্ট পাথর এবং নদী শাসনের কাজে ব্যবহূত ২ লাখ ২২ হাজার টন বোল্ডারের বিক্রি কমে গেছে।’

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৫ মে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন তিন শিফটে ৫ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক শিফটে ৭-৮শ টনের বেশি পাথর উত্তোলন করতে পারেনি। এর ফলে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। 

টিএইচ