দিনাজপুরের পার্বতীপুরে দেশের একমাত্র বৃহৎ পাথর খনি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) এ যথেষ্ট উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও পাথর বিক্রয় কমে যাওয়ায় বর্তমানে আটকা পড়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার টন পাথর।
বর্তমানে মধ্যপাড়া খনি হতে ৩ শিফটে দৈনিক গড়ে প্রায় ৫ হাজার ৫শ এবং প্রতিবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬ সাইজের মোট প্রায় ১৫ লাখ টন গ্রানাইট পাথর উৎপাদিত হচ্ছে।
এমজিএমসিএলের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, দৈনিক গড়ে ৬ হাজার টন হারে বছরে মোট ১৮ লাখ টন পাথর সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন আকারের আনুমানিক প্রায় ১০ লাখ ৮ হাজার ৫শ টন গ্রানাইট পাথর স্টক ইয়াডে মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশের পাথর আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিটন পাথরের বেইজ ভ্যালু ২-১৩ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে শুল্কারোপ করা হয় বিধায় আমদানি খরচ কম হয়।
সেক্ষেত্রে পাথরের বেইজ ভ্যালু বৃদ্ধি করে শুল্কায়ন করা হলে আমদানি মূল্য বৃদ্ধি পাবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রি করা সহজ হবে। পূর্বে শুধুমাত্র বিক্রিত পাথরের উপর গড়ে ২.৫% রয়্যালিটি নির্ধারিত ছিল। ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ হতে খনিমূলে উৎপাদিত ওজনের উপর ভিত্তি ধরে টনপ্রতি ২২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে তার উপর ২.৫% রয়্যালিটি প্রদান করা হতো।
বর্তমানে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ হতে পাথরের টনপ্রতি উৎপাদন খরচ ২২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে তা বিক্রয় করা না হলেও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে ৫% রয়্যালিটি প্রদান করতে হয়। এছাড়াও পাথরের বিক্রয় মূল্যের উপর এআইটি ও সিডিভ্যাট আরোপ করায় পাথরের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
বর্তমানে প্রতিটন উৎপাদন খরচ ২২.০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে তার উপর খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে ৫% রয়্যালিটি প্রদান করায় বর্তমানে উৎপাদিত পাথরের উপর নির্ধারণ করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে মজুদকৃত পাথর দ্রুত বিক্রি ও স্ট্যাক ইয়াড খালি করে উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে উৎপাদন খরচের চেয়ে গড়ে আনুমানিক টনপ্রতি ২৫৮ টাকা কমে পাথর বিক্রি করা হচ্ছে।
এমজিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান জানান, গত জুলাই মাসে পাথর বিক্রয় হয়েছে ৬৩ টন, আগস্টে ৩৫ মে. টন এবং সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৫ টন।
তিনি আরও বলেন, আগামী ডিসেম্বরে যমুনা রেলসেতু উদ্বোধন করা হলে সারা দেশে স্বল্প খরচে পাথর পরিবহনের নিমিত্ত মধ্যপাড়া হতে ভবানীপুর পর্যন্ত ১৩ কি.মি. রেললাইনটি বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হলে খনির পাথর কম খরচে মধ্যপাড়া হতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশ সরকারের সরকারি বিভিন্ন নির্মাণ কাজে মধ্যপাড়া খনির পাথর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহারের বিষয়ে সরকার কর্তৃক পরিপত্র জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), গণপূর্ত অধিদপ্তর, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, রূপপুর পাওয়ার প্লান্ট ও অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করলে পাথর আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
টিএইচ