শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

মনপুরার ২০ জেলে ট্রলারসহ বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ 

মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি

মনপুরার ২০ জেলে ট্রলারসহ বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ 

ভোলার মনপুরা উপজেলার এফবি রিনা-১ নামে একটি ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১৬ দিন ধরে ট্রলারসহ ২০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। এতদিনেও নিখোঁজ জেলেদের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারগুলোয় চলছে শোকের মাতম।

তবে নিখোঁজ ট্রলারটির পাশে থাকা মাছ ধরার মনপুরার অন্য ট্রলারের জেলেদের দাবি, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর কবলে পড়ে ট্রলারটি সাগরে ডুবে গেছে। গত রোববার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন মনপুরা থানার ওসি জহিরুল ইসলাম, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অলিউল্লা কাজল ও এফবি রিনা-১ ট্রলারের মালিক আক্তার হোসেন।

এদিকে নিখোঁজ জেলে শেখ ফরিদের স্ত্রী কুলসুম বেগম অভিযোগ করে বলেন, ট্রলার মালিকপক্ষ জোর করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে মাছ ধরতে পাঠিয়ে জেলেদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

অন্যদিকে ট্রলার মালিক আক্তার হোসেন উল্টো অভিযোগ করে জানান, জেলেরা না জানিয়ে রাতের আঁধারে ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। এ ব্যাপারে তিনি গত শুক্রবার মনপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

ট্রলার মালিক আরও জানান, ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলেদের অনুসন্ধানে তার ভাই মনির ও আবুল পৃথক দুটি ট্রলার নিয়ে ১০ দিন ধরে সাগরে অভিযান চালায়, কিন্তু নিখোঁজ জেলেসহ ট্রলারের কোনো হদিস না পেয়ে তারা গত শুক্রবার মনপুরার জনতা ঘাটে ফিরে আসে।

এফবি রিনা-১ ট্রলারে থাকা নিখোঁজ ২০ জেলের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মনপুরার জনতা ঘাট থেকে রাতের আঁধারে অন্য ট্রলারের সঙ্গে এফবি রিনা-১ ট্রলারের ২০ জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যান। মনপুরার অন্য ট্রলারের পাশাপাশি দূরত্বে বঙ্গোপসাগরের ড্রাম বয়া নামক স্থানে ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলেরা জাল ফেলে মাছ শিকার করছিলেন।

২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল হতে থাকে। পরে ২৫ অক্টোবর সাগরে ফেলা জাল দ্রুত তুলে মনপুরার অন্য ট্রলার ফিরে আসলেও এফবি রিনা-১ ট্রলারটি ফেরেনি। পরে ২৬ অক্টোবর জনতা ঘাটে ট্রলারটি ফিরে না আসায় এর মালিক তার দুই ভাই আবুল ও মনিরকে পৃথক দুটি ট্রলার নিয়ে সাগরে নিখোঁজ জেলেদের খোঁজ করতে পাঠায়। কিন্তু ১০ দিন খোঁজ করার পরও নিখোঁজ ট্রলারসহ জেলেদের কোনো হদিস না পাওয়ায় ট্রলার দুটি মনপুরায় ফিরে আসে। পরে ট্রলার মালিক ৩ নভেম্বর থানায় জিডি করেন।

সাগরে নিখোঁজ ট্রলারের পাশাপাশি দূরত্বে মাছ শিকার করা অপর ট্রলারের মাঝি শিপন জানান, ‘সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢেউ উত্তাল হলে নিখোঁজ ট্রলারে জেলেরাসহ আমার ট্রলারে থাকা জেলেরা দ্রুত জাল তুলে ফেলি। পরে মনপুরা দিকে রওনা করি। কিছুক্ষণ পরে নিখোঁজ ট্রলারটি আর দেখা যায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ট্রলারটি সাগরে ডুবে গেছে বলে তিনি মনে করছেন।

এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল জানান, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এফবি রিনা-১ ট্রলারসহ ২০ জেলে নিখোঁজ থাকায় পরিবারে সদস্যরা আহাজারি করছে। নিখোঁজ জেলে পরিবারের সদস্যদের বাড়ি গিয়ে শান্ত্বনা দিয়ে এসেছি। পাশাপাশি কোস্টগার্ডকে জানানো হয়েছে। কোস্টগার্ড বিষয়টি দেখছে। 

মনপুরা থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে থানায় জিডি করেছেন ট্রলার মালিক আক্তার হোসেন। তবে জেলেদের খোঁজ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষয়টি কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছে।

টিএইচ