শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

মহেশপুরের অভিশপ্ত নীলকুঠি বাড়ি এখন অবহেলায় পরিত্যক্ত

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

মহেশপুরের অভিশপ্ত নীলকুঠি বাড়ি এখন অবহেলায় পরিত্যক্ত

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগই অবহেলিত। ফলে কালের বিবর্তনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলো। এমনই এক প্রাচীন স্থাপত্য নীলকরদের স্মৃতি বিজড়িত নীলকুঠি বাড়ি।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ধারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় মানুষের কাছে কাচারী বাড়ি হিসাবে পরিচিত এই নীলকুঠি। খালিশপুর বাজারের পশ্চিমপাশে ৯ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে নীলকুঠি বাড়ি অবস্থিত।

দালানটি আঠারো শতকে নির্মিত হয়েছিল অনেকেই এমনটি ধারণা করে। এ কুঠি বাড়ি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব বাংলার কৃষকদের নীল উৎপাদনে উৎসাহী করা ও নীলচাষ দেখাশোনা করা। ইংরেজ মি. ডেভরেল এ কুটিবাড়ি থেকে এ অঞ্চলের নীলচাষ পরিচালনা করতেন।

শিল্প বিপ্লবের পথিকৃৎ ছিল ইংল্যান্ড। ওই সময় ইংল্যান্ডে সাদা কাপড়ের চাহিদা ছিল অত্যধিক। কাপড়ের সাদা রং বজায় রাখার জন্য নীল ছিল একটি অত্যাবশকীয় উপাদান। ভারতবর্ষ বৃটিশদের উপনিবেশ হওয়ায় বলপূর্বক ইংরেজরা ভারতবর্ষকে নীলচাষের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলে। নীলচাষের ফলে জমির উর্বরতা হারাত। তাই চাষিদের নীলচাষে অনীহা ছিল।

অধিকাংশ চাষিরা ইংরেজদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যও পেত না। যারা নীলচাষ করতো না তাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হত। এই কুঠিরেই কিছু কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হত।

৬৫ বছরের স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা আর আলোর মুখ দেখিনি। কুঠি বাড়ির চারপাশে রয়েছে শত বছরের বড় বড় আম গাছ। পাশে আরো অনেক বাড়ি ঘর ছিল যা বৃটিশদের গাড়ি রাখাসহ নানা কাজে ব্যবহূত হত।

এছাড়াও ছিল বৈকালীন অবকাশ যাপনের জন্য জায়গা যা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে নীলকুঠি বাড়িটিও অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

কুটি বাড়ির পশ্চিম পাশে সরকারি হামিদুর রহমান কলেজ ও স্মৃতি জাদুঘর অবস্থিত এবং পূর্বপাশে ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এই কুটিবাড়ির জায়গা খাস জমির তালিকাভুক্ত।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৮-১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশারাফুর রহমান এখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইকোপার্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।

স্থানীয়দের দাবি, কুঠি বাড়িটি এলাকার মানুষের উপর অত্যাচার ও নির্যাতনের সাক্ষ্য দিচ্ছে। ফলে এটি এখন ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। তাই এটি সংরক্ষণ করার দাবি তাদের।

ঝিনাইদহ ৩ আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজী বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্যে বহনকারী নীলকুঠিটি সংস্কার করে এখানে একটি ইকোপার্ক করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

টিএইচ