কিশোর বয়স থেকেই বাইচের নৌকার বৈঠা নিয়ে গিয়েছেন প্রতিযোগিতায়। পৈত্রিক সূত্রে অনেক সম্পদের মালিক হওয়ায় শখ পূরণ করতে তৈরি করেন বাইচের নৌকা। নৌকা বাইচই তার নেশা। প্রতিযোগিতায় গিয়ে কখনো হননি পরাজিত। পুরনো নৌকাটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় কয়েক বছর যেতে পারেননি নৌকা প্রতিযোগিতায়।
তাই শখ পূরণ করতে তৈরি করছেন নতুন নৌকা। আসছে বর্ষায় আশপাশের যেখানেই নৌকাবাইচ হবে সেখানেই অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত তার। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ফের শখ পূরণে ব্যয় করেছেন সাড়ে দশ লাখ টাকা। তৈরি করেছেন ১০০ হাত লম্বা একটি বাইচের নৌকা। শখ পূরণের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে রেখে যেতে চান বাংলার এ জনপ্রিয় সংস্কৃতির সঙ্গে। যুগে যুগে তারা যেন এ সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারে এমন প্রত্যাশা তার। তার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহলসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসন।
ছোট বেলায় নৌকাবাইচ দেখে প্রবল আগ্রহ জাগে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ভাটবালি গ্রামের দেলোয়ার আকনের। কিশোর বয়সে নৌকা বাইচের নৌকায় বৈঠা চালক হিসেবে তার শখ পূরণ করলেও এক সময় তৈরি করেন ৮০ হাত একটি বাইচের নৌকা। সেটা দিয়ে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নৌকা বাইচে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। নৌকাটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন দুরে ছিলেন নৌকা বাইচের।
কয়েক মাস আগে নতুন একটি বাইচের নৌকা তৈরির কাজে হাত দেন তিনি। ১০০ হাত লম্বা একটি বাইচের নৌকা তৈরির মূল কাজ শেষ করেছেন। নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বসে তৈরি করা হচ্ছে নৌকাটি। ৬ জন মিস্ত্রির সব মিলিয়ে প্রায় দুই মাস সময় লেগেছে বলে জানায় মিস্ত্রিরা। নৌকাটি তৈরিতে তেমন কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়নি বলেও জানায় মিস্ত্রিরা। সাজগোজ ছাড়া তেমন কোন কাজ বাকি নেই বললেই চলে। নৌকাটি তৈরি করতে সাড়ে দশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নৌকার কারিকর (মিস্ত্রি) সুনীল বাড়ৈ বলেন, নৌকাটি মালিকের মনের মত করে তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিক তেমন কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়নি নৌকাটি তৈরিতে।
নৌকার মালিক দেলোয়ার আকন বলেন, শেষ জীবনে নতুন প্রজন্মকে এ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এ উদ্যোগ আমার। সাড়ে দশ লাখ টাকা ব্যয় হবে নৌকাটি তৈরি করতে প্রশাসন থেকে কিছু সহযোগিতা পেলে ভালো হতো।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশীদ খান বলেন, সংস্কৃতি ধরে রাখতে তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তার মতো আরও অনেকেই এগিয়ে আসুক এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে। সহযোগিতা চাইলে সাধ্যমত চেষ্টা করা হবে।
টিএইচ