শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

মানববর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওর

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি  

মানববর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওর

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মিঠা পানির জলাভূমি খ্যাত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। কিন্তু অপরিকল্পিত টুরিজম, অসচেতনতা ও অবহেলায় দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে হাওরের পরিবেশ। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওরে পর্যটকরা প্রবেশ করার পর পয়ঃনিষ্কাশন করাসহ চিপস খেয়ে প্যাকেট, পানির বোতল, ওয়ান টাইম প্লাস্টিক প্লেট, কাগজের প্যাকেট, প্লাস্টিক, বর্জ্যসহ অপচনশীল দ্রব্য ফেলছেন হাওরের পানিতে। 

এছাড়াও হাওরে চলাচল করা ছোট-ছোট নৌকা ও হাউজ বোটগুলো থেকে ডিজেল কেরোসিনসহ নষ্ট মবিল, ইঞ্জিন অয়েল ফেলা হচ্ছে পানিতে। যা নষ্ট করছে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ।

অভিযোগ রয়েছে, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিনিয়ত নৌকায় করে উচ্চশব্দে সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়ে পরিবেশ দূষণ করছে উঠতি বয়সের যুবকরা। হাওরে নির্ধারিত স্থানে কোনো ডাস্টবিন না থাকায় হাওরের পানিতেই ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। 

তাছাড়া, হাওরে শৌচাগার না থাকায় হাউসবোটের শৌচাগারে মলমূত্রত্যাগ করা হচ্ছে, যা সরাসরি হাওরের পানিতে মিশে যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি পরিবেশকর্মীদের।

স্থানীয়রা জানান, দিনদিন হাওরে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় যন্ত্রযানও বাড়ছে। কিন্তু হাওরে এসব যান চলাচল করার কোনো নির্ধারিত রুট বা পথ নেই। হাওরে প্রবেশ করার পর কোথায় গিয়ে এগুলো থামবে, কোন পথ দিয়ে যাবে, সেটি চিহ্নিত করে দিতে হবে। 

নাহলে যন্ত্রযানের তাণ্ডবে প্রকৃতি-পরিবেশ বিপন্ন হতে পারে। ইতোমধ্যে হাওরে আগের মতো মাছ নেই, পাখি নেই। এমনকি সবুজ প্রকৃতিও দিন দিন বিবর্ণ রূপ ধারণ করছে।

টাঙ্গুয়ার হাওর তীরবর্তী জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আশঙ্কাজনক হারে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, ইঞ্জিন নৌকার ডিজেল হাওরে ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি ইঞ্জিনের শব্দ দিন দিন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাঠাবুকা গ্রামের বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী রিপছান হাবিব বলেন, ‘পর্যটনের নামে দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে টাংগুয়ার হাওর। যে হারে নানান ধরনের আধুনিক নৌকা হাওরে নামানো হচ্ছে তাতে শিগগিরই হাওর বিনষ্ট হবে। হাওরের সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, অপরিকল্পিত পর্যটন দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরকে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ যদি রক্ষা করা না যায় তাহলে পর্যটকও আসবে না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে আগত পর্যটকরা পানিতে যেন কোনো ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলেন, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হবে। পাশাপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন পথ দিয়ে নৌ-যান চলতে পারবে না। আমরা সেই নীতিমালা তৈরির কাজ করছি।

জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলায় তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে অবস্থিত। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান হিসেবে পরিচিত, প্রথমটি সুন্দরবন। স্থানীয় মেরদেহজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দা, ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্তমানে ৭৫ থেকে ৮০টি হাউস বোট ও ২০০ ট্রাডিশনাল বোট পর্যটক বহন করছে। তবে ছোট-বড় সব মিলিয়ে যন্ত্রযান প্রায় ৪০০ হবে।

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরে সরকার শত-কোটি টাকা খরচ করেছে। টাকা খরচ হলেও এর ফলাফল মিলছে না। কাঙ্খিত সুফল এখনো পাওয়া যায়নি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। টাঙ্গুয়ার ব্যবস্থাপনার নামে লুটপাট ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়েছে। হাওরের জীববৈচিত্র রক্ষায় রামসার কনভেনশনে বিশ্ব রামসার কমিটি ও বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা নীরব।

টিএইচ