শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

মিরপুর ভূমি অফিসের নানা অনিয়ম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি 

মিরপুর ভূমি অফিসের নানা অনিয়ম

কুষ্টিয়া মিরপুরে ভূমি কার্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে খোদ সহকারী কমিশনার (ভূমি) হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। জমির ধরন পরিবর্তন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। 

চলতি মাসের ১৫ জুন সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. আবু রাসেলের স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় তাকে বদলি আদেশ দেন। কিন্তু বদলি আদেশ বাতিল করে কুষ্টিয়াতে থাকতে বিভিন্ন মহলে ধর্না ধরছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। 

সূত্রে জানা যায়, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে উপজেলার নগরবাকা মৌজার ৭১ শতাংশ জমিকে ডোবা উল্লেখ করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেন হারুন অর রশিদ। ওই জমি কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ১৭ মে আবেদন এবং ১৮ মে শ্রেণি পরিবর্তন করে দেন এই সহকারী কমিশনার ভূমি। গত ২৪ মে জমিটি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর জানাজানি হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় মিরপুর উপজেলা জুড়ে। 

জানা যায়, নগরবাকা মৌজাতে বাড়ি শ্রেণির জমির সরকারি মূল্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা শতক এবং ডোবা শ্রেণির জমির সরকারি মূল্য মাত্র সাত হাজার টাকা শতক। শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারের প্রায় ৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয়। কিভাবে দুই দিনের মধ্যে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হলো এবং একজন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তহসিল অফিসের কেউ এর সাথে জড়িত থাকতে পারে, আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। নিজের দোষ ঢাকতে নামমাত্র ব্যবস্থা গ্রহণের নাটক করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে না পারলে পুনরায় আবার পূর্বের শ্রেণিতে খারিজ করে দেন। 

এ ছাড়াও তিনি নিজ কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকলেও তার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজের জন্য ব্যবহূত ল্যাপটপ, পাসওয়ার্ড এবং রুম ব্যবহার করান মালিহাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়ন শরিফকে দিয়ে। এই সহকারী ভূমি কমিশনারের মদদপুষ্ট শরীফের রয়েছে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি, অসাধু উপায়ে নাম খারিজ সহায়তাসহ নানা অভিযোগ। মূলত ওই পিয়নের মাধ্যমেই তিনি অর্থবাণিজ্য করে থাকেন বলে নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দালাল বলেন, সরকারিভাবে একটি জমি খারিজ করতে ১১৭০ টাকা ফি লাগে, কিন্তু এই ভূমি অফিসে আমাদের ২৫০০ টাকার প্যাকেজ আছে, সাম্প্রতিক সময়ে খাজনা দাখিলা জাল করে একটি জমি রেজিস্ট্রি করার পর বিষয়টি জানাজানি হলে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করে ভূমি কর্মকর্তার কাছে নিয়ে  গেলে দুজনের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকেই ছেড়ে দেয়ার অভিভেযোগও রয়েছে উপজেলা এই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। 

ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পকে বিতর্কিত করতে তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। যার মামলা এখনো চলমান বিজ্ঞ আদালতে। মালিকানা ফসলি জমি দখল ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানে ভবন নির্মাণ করেন এই কর্মকর্তা। ওই জমি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি হারুন অর রশিদ জানান, ওই জমির খাজনা দাখিলা জাল করার বিষয়ে জানার পরে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সাদা কাগজে মুচলেকার স্বাক্ষর নেয়া আমার ভুল হয়েছে। আর আমার দপ্তরে শিক্ষিত ছেলে না থাকার কারণে কিছু কাজ পিয়ন শরীফকে দিয়ে আমি করিয়ে নিই। 

এ ঘটনায় মিরপুর উপজেলার নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এসব বিষয়ে কিছু জানিনা। তবে এমন যদি হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টিএইচ