শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

যশোর জেলা পরিষদে চলছে গাছ চুরির মহোৎসব সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

যশোর প্রতিনিধি

যশোর জেলা পরিষদে চলছে গাছ চুরির মহোৎসব সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

যশোর জেলা পরিষদে চলছে গাছ চুরির মহোৎসব। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন বিভিন্ন সড়কের পাশের শতবর্ষী এসব গাছ প্রকাশ্যে লুটপাট করছে ক্ষমতাচ্যুত আ.লীগের নেতাকর্মীরা। 

অভিযোগ রয়েছে জেলা পরিষদের একাজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজসে এ গাছ চুরির ঘটনা ঘটছে। এর ফলে সরকার যেমন কোটি কোট টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে মারাত্মকভাবে। 

এলাকাবাসী বলেন, এতোদিন একটি রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকায় তার নেতাকর্মীরা মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক চেয়ারে বসে যা খুশি তাই করে গেছেন। 

সূত্র বলছেন, যশোরের জেলা পরিষদে রয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা মূল্যের শতবর্ষী শত শত রেইন্ট্রি কড়াই থেকে শুরু করে মেহগনি, শাল, সেগুন, আম কাঁঠালসহ নানা মূল্যবান বড় বড় গাছ। বিশেষ করে ঐতিহাসিক যশোর রোড, যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-নড়াইল মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক, যশোর-সাতক্ষীরা ভায়া নাভারণ মহাসড়কসহ যশোর-কেশবপুর, যশোর-চৌগাছা, যশোর-বাঘারপড়াসহ ছোট বড় প্রায় শতাধিক সড়ক রয়েছে যার মালিক যশোর জেলা পরিষদ। 

আর এসব মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে ছিল হাজার হাজার মহামূল্যবান কাঠের গাছ। কিন্তু গত সাত বছরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোটি কোটি টাকার গাছ নিলামের নামে চুরি করে বিক্রি করেছেন। 

সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর  যশোর-খুলনা মহাসড়কের শেষ সীমানা পর্যন্ত ৪ গ্রুপ ও যশোর ঝিনাইদহ সড়কের হৈবতপুর ব্রিজ পর্যন্ত ১ গ্রুপ সর্বমোট ৫ গ্রুপে ১৯৬২টি শতবর্ষী মেহগনি ও রেইন্ট্রি গাছ টেন্ডার করে জেলা পরিষদ। সে সময় নামে বেনামে এই ৫ গ্রুপের টেন্ডারই বাগিয়ে নেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের সহ সভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল ও তার ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিব নওশাদ পল্লব। প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের এসব গাছ মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকার মূল্যে কিনে নেন পিকুল ও তার ছেলে। 

একই ভাবে যশোর-নড়াইল ও যশোর-চুকনগর সড়কের গাছের টেন্ডারও নিজেদের নামে বেনামে ক্রয় করেন বাপ-বেটা। 

সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে তৃতীয় দফায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তার পছন্দের স্টাফ সার্ভেয়ার আল-আমিনকে কাজে লাগিয়ে শার্শা-গোগা সড়ক, শার্শা-গোড়পাড়া সড়ক, ঝিকরগাছা-বাকড়া সড়ক, ঝিকরগাছা-কায়েককোলা সড়ক, চৌগাছা-মহেশপুর সড়ক, চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়ক, চৌগাছা-যশোর সড়ক, পুলেরহাট-ত্রিমোহিনী সড়ক, সদর উপজেলার হৈবতপুর-পরানপুর সড়ক ও শার্শার গোড়পাড়া-ব্যাঙদা সড়কের ৫০৯টি রেইন্ট্রি ও মেহগনি গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে। 

গত ২৯ এপ্রিল এ টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার দেন দুই গ্রুপে ভাগ করে। ১নং গ্রুপে মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মহিদুল ইসলাম মিলন ভ্যাট আইটিসহ মোট ১৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা মূল্যে ২৫৬টি জীবিত গাছ ক্রয় করেন। আর ২নং গ্রুপের মৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২৫১টি গাছ ভ্যাট আইটিসহ ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেন মেসার্স জাহান এন্ট্রারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আ.লীগ নেতা শহরের কাজীপাড়ার তৌফিক জাহান।

 কিন্তুু মজার বিষয় হচ্ছে মেসার্স জাহান এন্ট্রারপ্রাইজের নামে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হলেও টেন্ডারের বিষয়ে কিছুই জানেন না তৌফিক জাহান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, জেলা পরিষদ কবে, কখন, কোথায়, কিসের টেন্ডার দিয়েছে বা কি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছে তা আমার জানা নেই। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ২নং গ্রুপের টেন্ডারের কেবল মাত্র আনুষ্ঠানিকতা করা হয়েছে কাগজপত্রে। কাজ হয়েছে সবই চেয়ারম্যানের নির্দেশে। 

এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, যেসব তথ্য পেয়েছেন তা রিপোর্ট করে দেন। আমি নিজেও এতোদিন খুবই অসহায় ছিলাম। যশোর জেলা পরিষদে গত ৫/৭ বছরে যেসব অন্যায় অনিয়ম হয়েছে তা ভাষায় বলা সম্ভব নয়। সব জেনেও কোন প্রতিকার করতে পারি নি। আপনারা সাংবাদিকরা এখন সুযোগ পেয়েছেন হাত খুলে লেখেন। বর্তমান সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

জেলা পরিষদের প্রশাসক ও যশোরের ডিসি আবরাউল হাসান মজুমদার বলেন, সব ঘটনা শুনেছি। কি করে এসব হচ্ছে তা তো বুঝতে পারছি না। ঘটনা তদন্ত করে ২ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে সিইওিকে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদের সব গাছের টেন্ডারের কার্যক্রম স্থগিত ও গাছ কাটা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছি। রিপোর্ট হাতে পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

টিএইচ