শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

লালপুরে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন পিতা 

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

লালপুরে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন পিতা 

বছর ২৪ আগেই বই ছেড়েছেন আব্দুল হান্নান। ইচ্ছা ছিল উচ্চশিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। এরপর আর লেখাপড়া করা হয়নি হান্নানের। নেমে পড়েন সংসার জীবনে। তবে ৪০ বছর বয়সে এসেও হাল ছাড়েননি তিনি। মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসেছেন পিতা আব্দুল হান্নান।

তাদের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর মহল্লায়। আব্দুল হান্নান ওই এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছোট ছেলে। বাবা আব্দুল হান্নান (৪০) উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে লালপুর থানা বালিকা কেন্দ্রে এসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে এবং মেয়ে হালিমা খাতুন (১৫) উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে লালপুর শ্রী সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। 

আব্দুল হান্নান পেশায় একজন চা বিক্রেতা। আব্দুল হান্নানের দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে হালিমা খাতুন (১৫) এবার এসএসসি পরীক্ষায় তার সঙ্গে অংশ নিয়েছে। এক ছেলে আবু হানিফ নিরব (১১) নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলের ৫ম শ্রণির শিক্ষার্থী ও ছোট ছেলে রমজান মিয়ার বয়স মাত্র চার বছর।

আব্দুল হান্নান জানায়, লেখাপড়ার কোন বয়স নাই। মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি গর্ববোধ করছেন। 

হান্নান আরো জানান, পৈতৃক সূত্রে গোপালপুর রেলগেট এলাকায় প্রাপ্ত একটা দোকানে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সমাজে আর দশজন মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে ছাত্র জীবনের সেই পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলার ইচ্ছা দিনে আরো বেশি হতে থাকে। 

লোকলজ্জার ভয় দূরে ঠেলে নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এই বয়সে লেখাপড়া শুরু করেন। এসএসসি পাশ করতেই হবে এমন জেদ করে বসেন তিনি। আর এই জন্য ২০২১ সালে সে উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম (ভোকেশনাল) শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এবছর এসএসসি (সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ভালো ফলাফল করতে পারেন এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। 

তার মেয়ে হালিমা খাতুন জানান, আমার খুব ভালো লাগছে, বাবাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, আমার বাবাকে দেখে অন্যরা পড়াশুনায় অনুপ্রানিত হবে বলে আমি মনেকরি। হালিমা খাতুন আরো জানায়, তার বাবার মেধা আছে এবং ইচ্ছা শক্তি আছে আর তাই এ বয়সেও তিনি লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছাটার কারণেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। আমরা বাবা -মেয়ে যেন একসাথে ভালো ফলাফল করতে পারে এ জন্য সবার কাছে দোয়া চয়েছেন তিনি।

লালপুর থানা বালিকা কেন্দ্রের সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার আসলে কোনো বয়স নেই। তিনি এই বয়সে সেটা বুঝতে পেরে লেখাপড়া শুরু করেছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।’

গোপালপুর পৌরমেয়র রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি বলেন, শিক্ষার জন্য বয়স কোন বাধা নয়, চাই মনের ইচ্ছা। আব্দুল হান্নান তা প্রমাণ করেছে। এ ধরণের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করবে বলে মনে করেন তিনি।’

টিএইচ