শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু

গাজীপুর প্রতিনিধি

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার লিফট আটকে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (১২ মে) সকাল পৌনে ১১টার দিকে মেডিসিন বিভাগ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তরের সময় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া রোগীর নাম মমতাজ (৫০)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিগাও গ্রামের শরীফ উদ্দীনের স্ত্রী।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. কামরুল ইসলাম।

এ ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি লিফট আটকে যাওয়ার ও রোগীর মৃত্যু কারণ অনুসন্ধান করে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে।

হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত কয়েকদিন আগে তার (মমতাজের) হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এই অবস্থায় তিনি আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে আসলে তাকে ১১ তলার মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক পরীক্ষার পর হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি ধরা পড়ে। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সকাল সাড়ে দশটার দিকে এই রোগীকে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউতে রেফার্ড করা হয়। পরে তাকে ওয়ার্ড থেকে সিসিইউতে নেওয়ার জন্য লিফটে তোলা হয়। লিফটি অজ্ঞাত কারণে আটকে যায়। সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর লিফট থেকে তাকে উদ্ধার করা হলে তাকে মৃত পাওয়া যায়।

এর আগে গত ৪ মে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী হাসপাতালের ১২ তলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মারা যাওয়া রোগীর নাম জিল্লুর রহমান (৭০)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া এলাকার কাসেম আলীর ছেলে।

মারা যাওয়ার রোগীর স্বামী অভিযোগ করেন, লিফটে নামানোর সময় আমি লিফটের বাইরে ছিলাম। পরে যখন লিফট আটকে যায়, তখন আমি একবার তিন তলায় (প্রশাসনিক ভবন), একবার পাঁচ তলায়, একবার সাত তলায় বিভিন্ন কর্মকর্তার নিকট দৌড়াদৌড়ি করি। আমার রোগীকে উদ্ধার করার জন্য, তাকে বাঁচানোর জন্য তাদের কাছে আবেদন-নিবেদন করি। কিন্তু তারা আমার আবেদনে সাড়া দেন নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসা দিলে আমার রোগী হয়তো বেঁচে যেতে পারত।

মারা যাওয়া রোগীর মেয়ে শারমিন বলেন, আমার মা সকালে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে সকাল ৬টায় তাজউদ্দীন হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রথমে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায় হার্টে সমস্যা বলে জানান। পরে ১১ তালা থেকে থেকে লিফটে ৪ তলার হৃদরোগ বিভাগে নেয়ার কথা বলে। তাদের কথামতো লিফটে উঠলে ৯ তলার মাঝামাঝি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়৷ এ সময় আমি, আমার মামা, ভাইসহ কয়েকজন মাকে নিয়ে ভেতরে ছিলাম। আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা লিফটে থাকা ৩ জন লিফটম্যানের ফোন দেই, কিন্তু তারা গাফিলতি করে। ফোনে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে।

তিনি আরও বলেন, ৪৫ মিনিট আমরা ভেতরে অবস্থান করেছি, উপায় না পেয়ে ৯৯৯ ফোন দেই। ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধার করে৷ লিফটম্যানদের গাফিলতির কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে কোন দায়িত্ববোধ নেই।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উপ পরিচালক) ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যায়নি। লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রোগী আটকে গিয়ে মারা গেছে। এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিফট আটকে যাওয়া ও রোগী মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে প্রতিবেদন দিবে। প্রতিবেদন পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টিএইচ