- জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে এলাকা ছেড়েছেন অনেকে
- শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছেন এ জুয়ায়, উদ্ধিগ্ন অভিভাবকরা
- জুয়া বন্ধে প্রযুক্তি ও কৌশল নিয়ে মাঠে পুলিশ প্রশাসন
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এমন খেলায় এখন মত্ত হয়েছেন উঠেছেন কিশোর-যুবকরা। শুধু কিশোর কিংবা যুব সমাজই নয় ক্ষেত্র বিশেষে বয়স্ক লোকেরাও জড়িয়ে পড়ছেন এমন বিধ্বংসী খেলার নেশায়। এতে যেমন সামাজিক অবক্ষয় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও অনেক পরিবার হচ্ছে সর্বশান্ত। সমাজ ও পরিবারে বাড়ছে অশান্তি, অভিভাবক ও সচেতন মহলে ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে এ ধরণের জুয়ায় অংশগ্রহণ করেন জুয়াড়িরা। বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করেন তারা। সবগুলো অ্যাপকে এক সাথে বলা হয় বেটিং সাইট। এসব অ্যাপ রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
নির্ধারিত অ্যাপে খেলায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নামে কিংবা পরিচিত অন্য ব্যক্তির নামে একটি একাউন্ট খুলতে হয়। এই একাউন্টে কিনতে হয় সরকারি অনুমোদনহীন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টো কারেন্সি। এজন্য ওই ব্যক্তিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ‘এজেন্ট’ নামধারী কথিপয় দালাল চক্রের ব্যক্তিকে পরিশোধ করতে হয় দেশীয় টাকা। যে পরিমাণ টাকা এজেন্টকে পরিশোধ করা হবে সে অনুপাতে ক্রিপ্টো কারেন্সি দেয়া হবে জুয়াড়ি ব্যক্তিকে।
টাকাগুলো লেনদেন করতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় বিকাশ, রকেট ও নগদ নামের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। তবে এ অঞ্চলে বিকাশের ব্যবহার হয় মাত্রাতিরিক্ত বেশি। এসব টাকার বেশির ভাগ অংশই চলে যায় যে দেশ থেকে অ্যাপটি পরিচালিত হয় সেই দেশে। এভাবেই অত্যাধুনিক ফর্মুলায় সকলের চোখের সামন দিয়েই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে।
২০২১ সালের সিআইডির দেয়া এক তথ্য থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র অনলাইন অ্যাপ্সের মাধ্যমে জুয়া খেলে প্রতি মাসে ২০-২৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমানে জুয়াড়ির সংখ্যা সে সময়ের তুলনায় বেড়েছে অনেকগুণ। তাই পাচারকৃত টাকার পরিমাণও বেড়েছে সেই অনুপাতে।
শুধু যে শান্তিগঞ্জ উপজেলাতেই এমন হচ্ছে তা কিন্তু নয়, সমস্ত দেশেরই একই অবস্থা। জুয়ার বিভিন্ন অ্যাপ থাকলেও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় এ অ্যাপস ব্যবহার হয় খুব বেশি। ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, তীর, লুডু, বিমান, ক্যারামসহ এমন কোনো খেলা নেই যা এই অ্যাপে খেলা যায় না। বিভিন্ন লীগ নিয়েও বাজি হয়ে থাকে এই অ্যাপে।
উপজেলার পাগলা বাজার, পাথারিয়া বাজার, আক্তাপাড়া মিনাবাজার, শান্তিগঞ্জ বাজার, দামোদরতপী পয়েন্ট, মামনপুর পয়েন্ট, পাগলা পশ্চিম পাড়া পয়েন্ট, বীরগাঁও বাজার, খালপাড়, নোয়াখালী বাজার, জিবদারা বাজার ও ছাতক উপজেলার বড়কাপন পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ও খেলার মাঠে বসে এমন ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠেন তরুণরা।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পয়েন্টগুলোর চায়ের দোকানে, সিএনজি-লেগুনায়, খেলার মাঠের কোণে এমনকি রাস্তার পাশে বসে আড্ডা দেয়া ছলে এসব খেলা খেলে থাকেন জুয়াড়িরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জুয়াড়ি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খেলি। হারতে হারতে জীবনটা বরবাদ করে ফেলেছি। একবার জিতলে একমাস দুইমাস যায় হারতে হারতে। এটা একটা নেশার মতো। এসব খেলায় কোনো লাভ নেই। নিঃস্ব হয়ে অনেকে ঘরবাড়ি এমনকি এলাকা ছাড়া হয়েছেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের শান্তিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি, হোমিও চিকিৎসক শাকিল মুরাদ আফজল বলেন, যে হারে সমাজে অনলাইন জুয়া বাড়ছে তাতে আমরা ক্রমশ উদ্বিগ্ন হচ্ছি। একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে সমাজ। এ থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমাদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শান্তিগঞ্জ থানার ওসি মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, এটা এমন একটি খেলা যা জুয়াড়িরা মোবাইলে খেলে থাকেন। দেখে বুঝার উপায় নাই যে এই ব্যক্তিই জুয়া খেলছেন। তবে আমরা বসে নেই। প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে আমাদের অভিজ্ঞ টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যে অভিযান করে একাধিক জুয়াড়িকে এর আগে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের কাজ চলমান আছে। শুধু আমাদের কাজ করলে হবে না, সাধারণ মানুষ আমাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।
টিএইচ