সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

শালিখার কালিদাশখালী-আড়পাড়া খাল প্রভাবশালীদের দখলমুক্তের দাবি 

শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি

শালিখার কালিদাশখালী-আড়পাড়া খাল প্রভাবশালীদের দখলমুক্তের দাবি 

দীর্ঘ বিশ বছরের বেশি সময় ধরে কালিদাসখালী-আড়পাড়া খালের দুই পাশে অবৈধভাবে বাঁধ স্থাপনা করে মাছ শিকার করছেন মাগুরা জেলার সদর উপজেলার কুঁচিয়ামোড়া ইউনিয়নের মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। কোনো বন্দোবস্ত বা ইজারা ছাড়াই বছরের পর বছর মাছ ধরছেন তারা। 

মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বরইচারা-কুঁচিয়ামোড়া গ্রামের মধ্যবর্তী এই মুক্ত জলাশয়ে মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষের মাছ ধরার অধিকার থাকলেও তা করতে দেন না ওই প্রভাবশালী চক্র। 

অভিযোগ রয়েছে শ্রীহট্ট, পুকুরিয়া, কুমারকোটা ও আনন্দনগরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাছ শিকার করতে আসলে অনেকের কাছ থেকে জাল, বড়শি, গাজে  কেড়ে নেন প্রভাবশালী ওই সমিতির সদস্যরা। শুধু তাই নয় কুঁচিয়ামোড়ার পার্শ্ববর্তী গ্রাম হাটবাড়িয়া গ্রাম থেকে উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের ভাড়া করে এনে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাছ শিকারিদের মারধরও করেন তারা। 

আড়পাড়া ইউনিয়নের কুমারকোটা গ্রাম থেকে মাছ শিকার করতে আসা মোতালেব জানান, আমি এখানে মাছ শিকার করতে আসলে কুঁচিয়ামোড়ার কিছু লোকজন আমাকে মারধর করে এবং আমার কাছ থেকে জাল ও গাজে কেড়ে নেয়। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বরইচারা-কুঁচিয়ামোড়ার বেড়িবাঁধের উপর নির্মিত স্থানীয়ভাবে দোসীমানার খাল নামে পরিচিত কালিদাসখালী-আড়পাড়া নামে ওই খালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে যার পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে ফটকী নদী এবং দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে বড় বিল। 

স্লুইসগেটের দুই পার্শ্বের অন্তত দেড় কিলোমিটার জায়গা জুড়ে চাঁন বেড় ও বড় বড় বাঁশ দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে একটি লাল পতাকাও টানানো হয়েছে। কয়েকটি টং ঘর তৈরি করে রাত দিন মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত ওই সমবায় সমিতির সদস্যরা। খালের পার্শ্ববর্তী ফটকী নদীর কিছু জায়গাতেও বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার করছেন তারা। 

প্রতি মৌসুমে দুই পাশের পুরো খাল সেচে লাখ লাখ টাকার মাছ শিকার করেন কুঁচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার করা নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না তারা। 

খালের উপর নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইসগেটের দায়িত্বে থাকা লালমিয়া বলেন, কুঁচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা যে জায়গা থেকে মাছ শিকার করছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা। এই জায়গাটি আমাদের দপ্তর থেকে কখনোই ইজারা দেয়া হয় না। 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাগুরা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন বলেন, স্লুইসগেটের নিম্নগামী যে খালটা সেটা সম্পূর্ণই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায়, এটি আমরা কখনই ইজারা দেয় না এখান থেকে সকলেই মাছ শিকার করতে পারবে। কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এককভাবে মাছ শিকার করতে পারবে না। 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কুচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সুজন বিশ্বাস জানান, আমরা মাগুরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ডিসিআর কেটে এই জায়গা থেকে মাছ শিকার করে আসছি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে, তবে ডিসিআর বা ইজারার কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। 

দেখতে চাইলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখে আসতে বলেন তিনি। কুচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য রতন প্রামানিক বলেন, আমরা দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে এই খাল থেকে মাছ শিকার করে আসছি। মুক্ত জলাশয় থেকে সবাইকে উন্মুক্তভাবে মাছ শিকার করার সুযোগ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

টিএইচ