অবৈধ চায়না দুয়ারি জালে ভরে গেছে মাগুরার শালিখা উপজেলার খাল বিল। ম্যাজিক জাল এবং ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয় এই চায়না দুয়ারি জালকে। নাম চায়না দুয়ারি হলেও উৎপাদন বাংলাদেশে।
মাছ ও জলজ প্রাণি বিধ্বংসী এই চায়না দুয়ারীর মাধ্যমে মাছ মারার ধুম পড়েছে বুরুলিয়ার বিলসহ শালিখা উপজেলার সব খাল বিল নদী। মেস-সাইজ কম থাকায় কারেন্ট জালের পাশাপাশি চায়না দুয়ারির ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও মানছেন না সে আইন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বুরুলিয়া বিলের বিভিন্ন জায়গায় পাতা হয়েছে চায়না দুয়ারি। পানির নিচে জাল রেখে শক্ত লাঠির সাহায্যে বেঁধে রাখা হয়েছে জালের দুই প্রান্ত।
৫০-১০০ ফুট লম্বা এই জালগুলো মিহি ও পাতলা হওয়ায় খুব সহজেই তলিয়ে থাকছে পানির নিচে। আর এই জাল এত সূক্ষ্ম যে ছোট ছোট জাতের মাছ, এমনকি মাছের ডিমও অনেক সময় উঠে আসছে। জালগুলো হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসবিশিষ্ট, যা কপাটের মত কাজ করে।
এতে মাছসহ যেকোন জলজ প্রাণি একবার ঢুকে পড়লে জালের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। জানা গেছে, এক রাতে এই জালে যে পরিমাণ মাছ উঠে তা অন্য কোনো জালে উঠে না, পরিশ্রমও তেমন করতে হয় না এবং জালগুলো সহজলভ্য হওয়ায় এই জালের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাছ ধরার পাশাপাশি মাছের ডিম ও অন্য জলজ প্রাণি মারা হচ্ছে এই নিষিদ্ধ জালের মাধ্যমে। বুরুলিয়ার বিলে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পুটি, কই, টেংরা, টাকি, বেলে, ফোলই, জিয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির শিং মাছ যা শিকার করতে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়েছে মাছখেকোরা। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় জাল পাতা।
সকালে মাছে ভরা জাল ঝেড়েই বিক্রি করে স্থানীয় বাজারে। আয় করেন হাজার হাজার টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, বরইচারা বাজার, বাউলিয়া বাজার এবং কালিতলার মোড়ে যে সকল লোকেরা মাছ বিক্রি করে তাদের অধিকাংশের দুয়ের অধিক চায়না দুয়ারি জাল রয়েছে যা তারা বুরুলিয়ার বিলে পেতে মাছ ধরে।
বরইচারা, বাউলিয়া ও আড়পাড়া বাজারেই অতি গোপনে চায়না দুয়ারি বিক্রি হয় বলে জানান তারা। এভাবে অবাধে চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে দেশি মাছ ধরায় দেশি মাছের উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলেও ধারণা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
অতিসত্বর সংশ্লিষ্ট দপ্তর চায়না দুয়ারি জালের ক্রয়-বিক্রয় প্রতিরোধপূর্বক মাছখেকোদের শাস্তির আওতায় না আনলে নিকট ভবিষ্যতে দেশি মাছের উৎপাদন একেবারেই কমে গিয়ে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে বলে মনে করেন তারা। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, অভিযানখাতে বরাদ্দ কম থাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযান করতে পারছি না তবে মাঝে মাঝে অভিযান চলছে।
টিএইচ