শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

শ্যামনগরে চিংড়ি ছেড়ে ধান চাষে ঝুঁকছে উপকূলের মানুষ 

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

শ্যামনগরে চিংড়ি ছেড়ে ধান চাষে ঝুঁকছে উপকূলের মানুষ 

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মৎস্যচাষে ভাটা, ধান চাষে ঝুঁকছে উপকূলের মানুষ। উপকূলের ৯০% মানুষ ধান চাষে আগ্রহী হলেও বাকি ১০% অর্থশালীরা নারাজ লোনাপানি বন্ধ করতে। বর্তমান কিছু কৃষক মৎস্যঘেরী বন্ধ করে ধানচাষ করতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু পাশের লোনাপানির চাপে নষ্ট হচ্ছে ধান। 

অনেকে মন্তব্য করছেন, মৎস্যঘেরীতে বছরের পর বছর লোকশান হচ্ছে কিন্তু লোনাপানি উত্তোলন বন্ধের অভাবে তারা ধান চাষ করতে পারছে না। আর বাক্সকলের মালিকরা লাভের আশায় বন্ধ করছে না লোনাপানি। 

কিছু সচেতন মহল জানিয়েছেন যে, বাক্স কল অপসারণ করলে লোনাপানি উঠা বন্ধ হবে। আর লোনাপানি বন্ধ হলে মৎস্যঘেরী বন্ধ হবে। উপকূলের মানুষ ফিরে পাবে মিষ্টি পানির আধার আর সেই সাথে খালগুলো উন্মুক্ত হয়ে যাবে। সেই সাথে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশনও হবে। ধান চাষে মানুষ লাভবান হবে এবং উপকূলের মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভর কমিয়ে দিবে। 

এলাকার মানুষ কর্মশীল হয় পড়বে। কয়েকজন মাৎস্যঘেরীর মালিকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, পর পর লোকশান হয়ে প্রায় সর্বশান্ত তারা। সাতক্ষীরাসহ উপকূলের চিংড়ি সাদা সোনা নামে ক্ষ্যাত। আর এই সাদা সোনা চাষে ভাটা পড়ার প্রধান কারন হ্যাচারি। হ্যাচারি মাছের দাম কম। যার ফলে ঘেরী মালিকেরা হ্যাচারি মাছের উপর বেশি ঝুঁকে। 

অবশ্য হ্যাচারি মাছ দ্রুত গ্রোদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ভাইরাসে আক্রান্ত হয় বেশি। আবার দেশীয় (নদীর) মাছের চাহিদা থাকলেও সচারাচর পাওয়া যায় না। এবং দামেও অনেক বেশি। তবে দেশি মাছ গ্রোদ কম থাকলেও আকারে বড় হয় এবং ভাইরাসে আক্রান্ত হয় কম। প্রতিবছর ভাইরাসের  কারণে ১৬ হাজার টন চিংড়ি মাছ মারা গিয়ে থাকে।

আব্দুস সালাম বলেন, একটি ২০ বিঘা মৎস্যঘেরী ২ লাখ টাকা মূলে হারি বা ইজারা নিয়ে থাকে। ঘেরীতে আনুমানিক ২০ হাজার টাকা খরচে করা হয় বিভিন্ন প্রসেসিং। মাটির কাজ (সংস্কার) আনুমানিক ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। 

১ম কোটায় ১২ থেকে ১৫ হাজার মাছ ছাড়াসহ আংশিক খরচ ১০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। গতবার ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ বছর দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হতে পারে। 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিস তুষার মজুমদার থেকে তথ্য সূত্রে জানাগেছে যে, উপজেলায় ১৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে মাৎস্যচাষ হয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই দুই মাসে পরিবেশগত কারণে মাছ মরে থাকে। তবে ভাইরাসের কোন লক্ষণ পাওয়া যায়নি। প্রতিবছর এই দুই মাসে পরিবেশগত কারনে পানির লবণাক্ততা, রোদের তাপদাহসহ ঘেরীর কম গভীরতার ফলে বিঘা প্রতি ১০ কেজি হারে মাছের মৃত্যু হয়ে থাকে। 

উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা জানান, ১৭ হাজার ৫শ ৩৯ হেক্টর জমিতে কৃষি চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে আমন ধান চাষ হয় ১৬ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমি, ইরি ধান চাষ হয় ২ হাজার ৩শ হেক্টর জমি, সবজি চাষের জমির পরিমান শীতকালীন ৭১০ ও গৃস্মকালীন ৫৯০ এবং তরমুজ চাষের জমির পরিমান ১৫২ হেক্টর জমি। মৎস্যঘেরী বন্ধ করে নতুন করে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেছেন ধান চাষীরা। 

গবেষণা সংস্থা বার্সিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অফিসার রামকৃষ্ণ জোদ্দার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মৎস্যচাষে ভাটা পড়েছে। মানুষেরা ধান চাষে আগ্রহী হলে প্রাণ বৈচিত্র্য ফিরে পাবে। বিলুপ্তের পথে প্রাণীগুলো বংশবিস্তার করবে। 

টিএইচ