গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ (পশ্চিম পাড়া) এলাকার আমীর আলী (১১০) তার বসতঘরের পাশেই নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছেন। গত সাত বছর যাবত খুঁড়ে রাখা ওই কবরের পাশেই বসে থেকে দিনের অধিকাংশ সময় কাটান। প্রয়োজন হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও করেন। ওই কবরের ওপরে দু’চালা টিনের ছাউনি দিয়ে রেখেছেন।
স্ত্রী আমেনা খাতুনের মৃত্যুর পর তাকেও তার কবরের পাশে দাফনের জন্য উত্তসুরীদের অনুরোধ করে গেছেন। এদিকে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া করেছেন, যার আগে মৃত্যু হবে সে যেন পাশপাশি দু’জনের কবরের ব্যবস্থা করেন।
মৃত্যুর আগে কবর খুঁড়ে রাখার এমন ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আশপাশের লোক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পেয়ে লোকজন খুঁড়ে রাখা কবর দেখতে আসছেন।
আমীর আলী বলেন, তার বয়স ১১০ বছর। তার মনে চেয়েছে নিজের কবর নিজে খুঁড়ে রাখার জন্য। সেই ভাবনা থেকেই গত বছর সাতেক আগে তিনি নিজেই দিনের পর দিন কবরটি খুঁড়ে কবরের ভেতরের দেয়াল (ইটের গাঁথূনি) দিয়ে পাকা করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার কবর খোড়ার জন্য যেন কাউকে পরিশ্রম করতে না হয় সেই ভাবনা থেকেই তিনি এ কাজটি করেছেন। এতে কারও প্ররোচনা বা কারও পরামর্শ তিনি নেননি বলেও জানান।
আমীর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, সে বলেছে সে আগে চলে যাবে। খুঁড়ে রাখা কবর দেখে তার মনটা সবসময় নরম থাকবে। কবর খননে কাউকে কোনো পরিশ্রম করতে না দেয়ার জন্যই নিজের কবর নিজে খনন করেছে। সে যেখানে কবরস্থ হবে আমাকে তার পাশে জায়গা রেখে গেছে। সেখানে আমার কবর হবে। আমার কবর অবশ্য খনন করা নেই। এটা আমার এবং তার প্রতিজ্ঞা।
প্রতিবেশী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমীর আলী নিজের কবর নিজেই অগ্রীম খুড়ে রেখেছে। এলাকার সকলের সাথে আমি নিজেও গিয়ে দেখে এসেছি। মৃত্যুর আগে কবর খুড়ে রেখেছে, তার মৃত্যু এখানে হবে কিনা আল্লাহ ছাড়া কে জানে? তার বিষয় সে যেমন বুঝেছে তেমনই বাড়ির সামনে কবর খুড়ে রেখেছে।
আমীর আলীর বন্ধু ইব্রাহীম হোসেন বলেন, তার কবর সে নিজেই খনন করেছে কিনা জানি না। তবে কবর দেখেছি। আমরা তার বাড়িতে প্রতি বৃহষ্পতিবার যাই। জিকির আসগার করি। আমরা একই তরিকার লোক। সে আমাদের কাছে বলেছে, তার কবর সে নিজেই খনন করেছে। মারা গেলে তাকে এখানে কবর দেয়ার কথাও সে বলেছে।
শ্রীপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহিদ সরকার বলেন, এলাকার মানুষসহ আমরা সবাই জানি আমীর আলী তার কবর নিজেই অগ্রীম খনন করে রেখেছে। বয়স বেশি হওয়ায় আমরা তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি।
টিএইচ