সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

সখীপুরে ৫২ বছরেও চিহ্নিত হয়নি টেকিপাড়া বধ্যভূমি  

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

সখীপুরে ৫২ বছরেও চিহ্নিত হয়নি টেকিপাড়া বধ্যভূমি  

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পার হলেও টাঙ্গাইলের সখীপুরের টেকিপাড়া বধ্যভূমি চিহ্নিত ও তা সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে ওই জমি উদ্ধার করে সেখানে একটি ‘স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। ওই বধ্যভূমিটি উপজেলার হাতীবান্ধা গ্রামের টেকিপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র সরকারের বাড়ির উত্তর-পূর্ব পাশে অবস্থিত।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের কামালিয়াচালা বাজার ঘেরাও করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ওইদিন ছিল সাপ্তাহিক হাটবার। হাট চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর একটি দল মির্জাপুরের পাথরঘাটা, আরেকটি দল বাসাইল এলাকা থেকে অস্ত্র নিয়ে ওই হাটে আক্রমণ করে। 

হানাদার বাহিনী দেখে হাটের লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে পালিয়ে যায়। ওই বাজারে আসা মির্জাপুরের ছাওয়ালী গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী ১০ ব্যবসায়ীকে হাত-পা বেঁধে নৌকায় করে টেকিপাড়া খালের পাশের ওই জঙ্গলে নিয়ে যায়।

 সেখানে ওই ১০ ব্যবসায়ীকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। তারা লাশগুলো ওই জঙ্গলে ফেলে যায়। সেখানেই লাশগুলো পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এর কিছুদিন আগে একই স্থানে হানাদার বাহিনী মির্জাপুরের মহিষডাঙ্গা এলাকায় পাঁচজনকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে একই জঙ্গলে ফেলে দেয়।

হানাদার বাহিনীর গুলিতে গণশহীদ হওয়া ওই ১০ ব্যবসায়ী হলেন, মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ছাওয়ালী গ্রামের পাচু সাহার ছেলে প্রাণ প্রল্লব সাহা, মাদক বণিকের ছেলে মধু বণিক, কানাই বণিকের ছেলে গৌরচন্দ্র বণিক, বোরন সাহার ছেলে কৃষ্ণপদ সাহা, হারাধন সাহার দুই ছেলে গৌরপদ সাহা, অযোদ্ধা সাহা, যদু সাহার ছেলে গৌর শাহ, সুরেশ ঠাকুরের দুই ছেলে তাপস ঠাকুর ও গৌর ঠাকুর, যদু মোহন মণ্ডলের ছেলে খোকা মণ্ডল। 

মির্জাপুরের মহিষডাঙ্গা এলাকার শহীদ হওয়া ওই পাঁচজন হচ্ছেন, প্রভাত বাদ্যকর, তার ছেলে হুনু বাদ্যকর, সোনাই বাদ্যকর, রমেশ চন্দ্র সরকারের ছেলে নিতাই চন্দ্র সরকার, কাশিনাথ মণ্ডলের ছেলে পুণ্য চন্দ্র মণ্ডল। 

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ চন্দ্র সরকার বলেন, আমরা শুনেছি উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের টেকিপাড়ার ওই স্থানে জঙ্গল ছিল। জঙ্গল ছিল বলেই ওই স্থানটি লাশ রাখার জন্য নিরাপদ ছিল। সেখানেই লাশগুলো পচে গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর স্থানীয়রা পর্যায়ক্রমে জঙ্গল পরিষ্কার করে জমি দখলে নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে। আমার কষ্ট লাগে স্থানীয় প্রশাসন স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এই স্থানে শহীদদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করতে পারেনি।

হাতীবান্ধা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, স্থান চিহ্নিত করে ওই স্থানে স্মৃতি সংরক্ষণে দ্রুত ‘স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণ করা উচিত। তা না হলে আমাদের মৃত্যুর পর ওই স্থানটির কোন স্মৃতি চিহ্ন থাকবে না। 

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার এমও গণি জানান, হাতীবান্ধা গ্রামের টেকিপাড়ার অরক্ষিত বধ্যভূমির ওই স্থানটি দীর্ঘদিনেও সংরক্ষণ না করায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। স্থানটি সংরক্ষণে একটি ‘স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণ জরুরি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন পাটুরিয়া বলেন, হাতীবান্ধার ‘টেকিপাড়া বধ্যভূমি’ সংরক্ষণসহ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কয়েকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

টিএইচ