ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমির মাঝখানে গড়ে ওঠেছে একাধিক ইটভাটা। মাটি ফেলে দখল করে নিয়েছে কৃষকের চলাচলের সড়ক। অনুমতি ছাড়াই গোচারণ ভূমিতে শ্রমিকদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করেছেন স্থায়ী অস্থায়ী ঘর। ইটভাটার মাটি আর ইটের ট্রাক্টরে এখন বেহাল এক সময়ের সবুজ ঘাসের মসৃণ ৩ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কটি। বৃষ্টি হলেই সড়কটি খাল ও কাঁদা জমির আকার ধারণ করে।
ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর ধাউরিয়া গ্রামের জনজীবন। কাঁদা পানিতে লেপটে যায় কৃষক আর গরুর রাখালরা। চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই জনপদের ৪ সহস্রাধিক নারী পুরুষ।
সরজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, শাহজাদাপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুটি গ্রাম নিয়ামতপুর ও ধাউরিয়া। গ্রাম দুটিতে প্রায় ৪ সহস্রাধিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। বর্তমানে ওই দুই গ্রামে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামের দক্ষিণ পাশে হাওরের মাঝ দিয়ে দেওড়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটিই তাদের মূল ভরসা।
যুগযুগ ধরে তারা এই সড়ক দিয়েই উপজেলা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া আসা করছেন। দেওড়া গ্রাম থেকে শুরু হয়ে চোয়াইল আগার হয়ে বিশাল প্রস্থের এ সড়কটি ছিল সবুজ ঘাসে ভরা খুবই মসৃণ। মাটিও ছিল লেভেল করা মজবুত। মোটরবাইক, রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজি রোদ বৃষ্টিতে চলতো খুবই স্বাচ্ছন্দে। শিশু কিশোর ও যুবকরা সড়কে ফুটবল খেলতো। কৃষকরা দিনে রাতে জমিতে চাষাবাদ, ধান কাটা, আনা নেয়া করতেন নির্বিঘ্নে।
ইটভাটার এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই রয়েছে ধাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইট উৎপাদন শুরু হওয়া মাত্র চরম কষ্ট আর দুর্ভোগ নেমে আসে দুই গ্রামের কপালে। দিনে রাতে ৩০-৪০টি ট্রাক্টর মাটি আর ইটা নিয়ে চলছে ওই সড়কে। মাটি ফেলে সড়ক দখলে নিয়েছে ইটভাটা। সড়কের পাশের গোচারণ ভূমিতে অনুমতি ছাড়াই ইটভাটার শ্রমিকদের জন্য নির্মাণ করেছেন স্থায়ী/অস্থায়ী ইমারত। ফলে সড়কটি হারিয়ে ফেলেছে তার আগের রূপ, যৌবন, মসৃণতা ও সৌন্দর্য্য। সড়ক জুড়েই এখন বড় বড় খানাখন্দ।
ইটভাটার ধোঁয়ায় ক্ষতি হচ্ছে আশপাশের ফসলি জমির। ভয়ে মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করছেন কৃষকরা। কারণ ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী। গ্রামের মানুষের কষ্ট ও আকুতি কোনভাবেই আমলে নিচ্ছেন না তারা। নিয়ামতপুর গ্রামের কৃষক হরে কৃষ্ণ সরকার, কাতু সরকার, শ্যামল সরকার ও ধাউরিয়া গ্রামের অনিল সরকার বলেন, সারা জীবন হেঁসে খেলে এই সড়ক দিয়ে চলছি। বড় মাঠের মত অত্যন্ত মজবুত সুন্দর। লাফিয়ে চলাফেরা করেছি। ইটভাটা হওয়ার পর ট্রাক্টরের অত্যাচারে সব সুখ কেড়ে নিয়েছে। সড়কটি এখন খালের আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি হলে হাঁটু সমান কাঁদা। ধান বন গরূ বাছুর নিয়ে চরম দুর্ভোগ।
ইউপি সদস্য ওই গ্রামের বাসিন্দা অমরেশ সরকার, ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি জগদিশ সরকার বলেন, ইটভাটা আর ট্রাক্টর আমাদের সকল সুখ ও স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। চলাচলের একমাত্র সড়কটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। ফসল উৎপাদনও কমে গেছে। অচল হয়ে পড়েছে কৃষিকাজ। আর বৃষ্টি হলে তো গ্রামের মানুষ নড়াচড়াই করতে পারে না। আমরা এই করূন ও দুর্বিসহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।
সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন সুলতানা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা আইন পরিপন্থী। মাটি রেখে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি ও গোচারণ ভূমিতে কিছু নির্মাণ করার কোন বৈধতা নেই। আর ট্রাক্টরের কাজ হচ্ছে হাল চাষ করা অন্য কিছু নয়। আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
টিএইচ