বুধবার (২০ মার্চ) থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা সপ্তাহে একবারের ঘোষণা দেয়ায় মৃত্যুর আতঙ্কে ভুগছে শতশত রোগী। এরফলে যেকোন সময় মৃত্যু হতে পারে শতশত কিডনি রোগীর।
সাংবাদিক জহুরুল কবীর জানান, তিনি জমিজমা সহায়-সম্পদ বিক্রি করে কিডনি আক্রান্ত স্ত্রীকে চিকিৎসা করিয়ে আসছিলেন। ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা কারনোর মতো সক্ষমতা তার নেই।
এমতাবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছে বুধবার (২০ মার্চ) থেকে সপ্তাহে একবার কিডনি আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাসিস করানো হবে। খবরটি শুনে তিনি ডুকরে কেঁদেছেন। এ যেন জীবন মৃত্যুর খবর। স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য তিনি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালিসিস সেবা চালু রাখতে তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে সাধারণ রোগিরা জানান, শতরোগীর জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে বন্ধ প্রায় সামেক হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট।
গত মঙ্গলবার ডায়ালাইসিস ইউনিট ইনচার্জ নমিতা রানী রোগীদের ফোন করে জানিয়েছেন বুধবার (২০ মার্চ) থেকে সপ্তাহে দুটির পরিবর্তে একটি ডায়ালাইসিস করানো হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯টি মেশিনের মধ্যে মাত্র দুটি জোড়াতালি দিয়ে চলছে। তাই সপ্তাহে আর দুই অথবা তিনবার ডায়ালাইসিস দেয়া হবে না। এটি পরিচালকের সিদ্ধান্ত।
রোগীদের অভিযোগ, পরিচালককে দীর্ঘ দেড় থেকে দুই বছর যাবৎ মেশিন মেরামতের কথা বলে আসলেও তিনি ‘চেষ্টা করছি’ বলে পরিচালকের রুম থেকে বের করে দেন। সদরের ফিংড়ির একজন রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা গত জানুয়ারি মাসে যখন মাত্র চারটা মেশিন চালু ছিলো তখন আমরা ক’জন রোগী নিয়ে পরিচালকের নিকট গেলে তিনি আমাদের ধমক দিয়ে বলেন, এখানে ঝামেলা করেন না, বাইরে যান। এরপর বের করে দেন। এছাড়া রক্তের ইনজেকশন ইপোটিন (ইথ্রোপোয়েটিন), বি-ক্যান ফ্লুইট, সিরিঞ্জ ইত্যাদি কিনতে হয়।
শ্যামনগর বংশিপুরের আজিজ মোড়লের পুত্র জয়নাল জানান, ‘আমার মা গ্রামে গ্রামে ও হাট-বাজারে ভিক্ষে করে আমার ডায়ালাইসিস খরচ চালায়। এখন যদি এখানে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেয় তাহলে যেকোন সময় আমার মৃত্যু হবে। কারণ প্রাইভেটে ডায়ালাইসিস করানোর সামর্থ আমার নেই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে সামেক হাসপাতাল পরিচালক ডাক্তার শীতল চৌধুরী জানান, অদক্ষ ব্যক্তি দ্বারা মেশিন পরিচালনা করায় সব মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোট কতটা মেশিন আছে আর নষ্ট মেশিনের সংখ্যা কত জানতে চাইলে সম্ভবত আমাদের মোট ডায়ালাইসিস মেশিন ১৯টি যার মধ্যে বর্তমানে তিনটি সচল আছে।
নষ্ট মেশিনগুলো মেরামত প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটাতো দীর্ঘ প্রসেসের ব্যাপার মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে মেরামতের জন্য কয়েক দফায় টেকনিশিয়ানও এসেছে কিন্তু খুচরা যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুত মেরামত করার চেষ্টা করছি।
টিএইচ