বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

সিলেটে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে ম্যাজিস্ট্রেট 

সিলেট প্রতিনিধি

সিলেটে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে ম্যাজিস্ট্রেট 

সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি মাঠে নামানো হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে সিসিক এলাকায় নিয়মিত কোন মশার রকম ওষুধ প্রয়োগ হয়নি। মশার ওষুধের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা হয়েছে তছরুপ। এবার হঠাৎ করে ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করায় ঘুম ভেঙেছে সিসিকের।

তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে ওষুধের বদলে এবার মশা মারতে ম্যাজিস্ট্রট নিয়োগ করেছে। সিসিক সূত্র জানিয়েছে ডেঙ্গুর লার্ভা পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো কিছু প্রকট হলে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়। প্রকট না হওয়ার আগ পর্যন্ত সচেতন হতে চাই না মানুষ। 

আমাদের দেশে নিয়ম হচ্ছে যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন মিডিয়াতে কাভারেজের জন্য জোরেসরে কাজ শুরু করে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। গত মঙ্গলবার থেকে জেলা প্রশাসনের দুজন ও সিসিকের দুজন করে মোট চারজন ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। 

মেয়র আরো বলেন, জরিমানা ২০০ বা ৫০০ টাকা করলে হবে না। জরিমানা করলে যাতে গায়ে লাগে তেমন জরিমানা করতে হবে। আমাদের সোজা আঙ্গুলে যখন ঘি উঠে না, তখম আঙ্গুল একটু বাঁকা করতে হয়। নগর ভবনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিলেট সিটি করপোরেশনের গৃহীত কার্যক্রম বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন একথা বলেন তিনি।

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এতোদিন ধরে আমরা মানুষকে সচেতন করেত মাইকিং করছি। রিপোর্ট দিচ্ছি কিন্তু কেউই কর্ণপাত করছে না। যখন পরিবারের কেউ আক্রান্ত হবে, বাচ্চা আক্রান্ত হবে বা মৃত্যু হবে তখন আমরা এজন্য দুঃখ প্রকাশ করবো। 

গত মঙ্গলবার সকাল থেকে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে। এগুলো মিডিয়া ফলোআপ করে প্রকাশ হলে মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম ডেঙ্গু বিষয়ক কার্যক্রমের বর্ণনা দেন। 

তিনি জানান, ডেঙ্গু বিষয়ক সচেতনতা সুষ্টির লক্ষে নগরের ৪২ ওয়ার্ডে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে, বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। ওয়ার্ড কাউন্সিলদের মাধ্যমে সচেতনামূলক প্রচারণা করা হচ্ছে। এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধানে অভিযান চলছে। বেসরকারি সেবা সংস্থার সহায়তায় লার্ভা অনুসন্ধান পরিচালিত হচ্ছে এবং যেসকল বাসা-বাড়ি, ভবনে লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষনিকভাবে সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যেসব বাসা-বাড়ি, দোকান, ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে সেসব স্থাপনার মালিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া মশক নিধনে সিসিকের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এদিকে সারাদেশের সাথে পাল্লা দিয়ে সিলেটেও বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। চলতি মওসুমে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সিলেটে মৃত্যু না হলেও আক্রান্ত প্রায় ৩০০ এর কাছাকাছি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সিলেটে আরো ২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে চলতি মওসুমে জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩০০ জন। বর্তমানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৩ ডেঙ্গুরোগী। 

সূত্রটি জানিয়েছে, গত রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ২৩ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ১০ জন, হবিগঞ্জ জেলার ১০ জন ও সুনামগঞ্জ জেলার ৩ জন রয়েছেন। 

চলতি মওসুমে (জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত) সিলেটে শনাক্ত হওয়া ২৯০ ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে সিলেট জেলার ১৭২ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ১৭ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৮৭ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ২৪ জন রয়েছেন। 

গত সোমবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ২৯০ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে ২১৭ জন ইতোমধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে ৭৩ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে সিলেটে ২৩ জন, সুনামগঞ্জে ৭ জন, হবিগঞ্জে ৪২ জন ও মৌলভীবাজারে ১ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

টিএইচ