শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

সুন্দরবনসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত পানিবন্দি দুই সহস্রাধিক মানুষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সুন্দরবনসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত পানিবন্দি দুই সহস্রাধিক মানুষ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ, পূর্ণিমার প্রভাবে টানা বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় মোংলা বন্দরে তিন নম্বর সতর্কতাসংকেত জারি করা হয়েছে। গেল পাঁচ দিন ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক  বেশি ঁচু জোয়ারে দুবার করে ডুবছে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা। 

সুন্দরবনের পাশাপাশি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজ আল আসাদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট পৌরসভার কিছু অংশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মোরেলগঞ্জের বহরবুনিয়া, খাউলিয়া, পুটিখালী, তেলিগাতি, হোগড়লাপাশা, কচুয়ার রাড়িপাড়া, বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা, ডেমা, কাড়াপাড়া, মোংলার সুন্দরবন, জয়মনির ঘোল, চিলা, রামপালের হুড়কা, বাসতলী, শরণখোলার সাউথাখালী ও রায়েন্দা ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অন্তত দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। বেশকিছু মাছের ঘেরও ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙ্গা এলাকার আতাহার হোসেন বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে বাড়িঘর সব ডুবে গেছে। খুবই খারাপ অবস্থায় আছি আমরা।

বহরবুনিয়া এলাকার সগির গাজী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ইটের রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। অনেকের বাড়িতে রান্নাবান্নাও বন্ধ। পানিতে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি আমরা।

এদিকে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। পানিতে সুন্দরবনের করমজল, জামতলা, হিরন পয়েন্ট, দুবলারচর, আলীবান্দা, আন্ধারমানিকসহ অধিকাংশ এলাকা দিনে দুবার করে ডুবছে।

অন্যদিকে জোয়ারে সাগর তীরের সুন্দরবনের দুবলা এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় সাগরে জোয়ারের পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে জোয়ারে কোথাও কিন ফুট, কোথাও এর কম-বেশি তলিয়ে গেছে। ভাটা হলে আবার পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি নজরে আসেনি।

বনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, গেল চার দিন ধরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে করমজল। এই এলাকা বনের অন্য অনেক এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু। তারপরও করমজলের রাস্তার ওপরে দেড় ফুট পানি উঠেছে শুক্রবার। বনের অভ্যন্তরে তিন-চার ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বনের কোথাও কোনো প্রাণী ভেসে যাওয়া বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। করমজলে কুমির, কচ্ছপ, হরিণ ও বানরসহ অন্যান্য প্রাণী নিরাপদে রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, জোয়ারের কারণে বনের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেলেও সুন্দরবনের জীবজন্তুর তেমন কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। প্রকৃতিগতভাবেই সুন্দরবনের বড় এলাকা জোয়ারে কিছু প্লাবিত হয়। এখানকার বন্যপ্রাণিগুলোর এই প্রকৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত। অতি উঁচু জোয়ারে বনের মধ্যে পানি বাড়ায় বন্যপ্রাণিদের কিছু সমস্যা হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হবে না বলেই ধারণা তার।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গায় উঁচু টিলা তৈরি করার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে বনে পানি বাড়লে বন্যপ্রাণীগুলো ওই সময়ে উঁচু টিলায় আশ্রয় নিতে পারে। পুরো সুন্দরবনে এ ধরনের ১২টি টিলা তৈরি করা হবে চলতি অর্থ বছরে।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা হারুণ-অর-রশীদ বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দু-তিনদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজ আল আসাদ বলেন, জেলায় ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। আমরা তালিকা করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দিদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

টিএইচ