সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

সৈয়দপুরে তৈরি হচ্ছে সস্তা দামে নিজস্ব প্রযুক্তির আইপিএস

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

সৈয়দপুরে তৈরি হচ্ছে সস্তা দামে নিজস্ব প্রযুক্তির আইপিএস

শিল্পনগরী খ্যাত নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. মাজহার সুলতান। তিনি পেশায় একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। বাসা শহরের গোলাহাট পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন এলাকায়। 

তিনি ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। ডিগ্রি অর্জন করেন বাংলাদেশ আর্মি সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়, সৈয়দপুর (বাউস্ট) থেকে। ছোট বেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল নতুন কিছু করার। পড়ালেখার অবসরে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও হাতুড়ি, বাটাল দিয়ে এটা ওটা করতেন।

মাজহার পড়ালেখা শেষ করেন ২০১৯ সালে। ডিগ্রি অর্জনের পর চাকরি করতে নারাজ তিনি। নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান তিনি। তার মাথায় আসে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা। একই সঙ্গে ভাবেন তিনি বিদ্যুতের শর্টসার্কিটে জানমালের ক্ষতির বিষয়। 

প্রচন্ড গরমকালে বাসাবাড়ির মানুষের হাসফাঁস দেখা দেয়। দুই/তিন ঘণ্টা একনাগাড়ে বিদ্যুৎ থাকে না। আবার প্রচন্ড তাপে প্রায় সময় শর্টসার্কিট থেকে ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ দুই বিষয় নিয়ে শুরু হয় মাজহার সুলতানের গবেষণা।

একপর্যায়ে তিনি নিজস্ব প্রযুক্তি ও দেশীয় যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে স্বল্পমূল্যের টেকসই ও রিপেয়ারযোগ্য আইপিএস তৈরির কাজ শুরু করেন। দেশের ব্রান্ড কোম্পানিগুলো বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে দেশে তা অ্যাসেম্বলি করে। অনেক কোম্পানি সরাসরি আইপিএস আমদানি করে। এতে করে নিজ দেশের ডলার চলে যায় বিদেশে। 

তাছাড়াও আমদানিকৃত বা অ্যাসেম্বলিকৃত আইপিএসের দামও অনেক বেশি, আয়ুষ্কালও কম। রিপেয়ার যোগ্যও নয়। তাই মাজহার সুলতান ডলারের সাশ্রয় করতে আইপিএস তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশের শতকরা ৯০ ভাগ দেশের বাজার থেকেই সংগ্রহ করেন। মাত্র ১০ ভাগ যন্ত্রাংশ বিদেশের। নিজ বাসায় স্থাপিত ওয়ার্কসপে দিনরাত পরিশ্রম করে নতুন প্রযুক্তির আইপিএস তৈরিতে সক্ষম হন। দীর্ঘ প্রায় চার বছর সময় লাগে সফলকাম হতে। 

এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে মাজহার সুলতানের তৈরি আইপিএসের বাজারজাত শুরু হয়। শুরুতেই নতুন প্রযুক্তির তৈরি এই আইপিএসের সুনাম ছড়াতে থাকে। এখন নিত্যদিন নতুন নতুন অর্ডার আসছে। 

এ ব্যাপারে প্রকৌশলী মাজহার সুলতান বলেন, তার তৈরি আইপিএস দিয়ে ৭টি ফ্যান, ১২টি বাল্ব ও দুটি টিভি চলবে। কোনো বাড়ির মালিক যদি ফ্যান, বাল্ব, একটি টিভি চালায় তাহলে চার ঘণ্টার জায়গায় সাত ঘণ্টা তার আইপিএস দিয়ে ওইসব ইলেকট্রিক পণ্য চলবে। 

তার দেয়া তথ্য মতে, বিদেশি আইপিএস অ্যালুমিনিয়ামের তার দিয়ে তৈরি। এতে আইপিএস দ্রুত গরম হয়। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইনসুলিশন গলে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এজন্য তিনি আইপিএসে শতভাগ তামার তার ব্যবহার করেন। এতে টেকসই হয়।

এছাড়াও আইপিএসে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর হাই ও লো ভোল্টেজ থেকে রক্ষা করে। সর্টসার্কিট ও ওভারলোডের শংকা থাকে না। ব্যাটারিকে ওভার চার্জ এবং লো-চার্জ থেকে সুরক্ষা দেয়। এতে ব্যাটারির ভোল্টেজ, আউটপুট ভোল্টেজ, কত লোড ব্যবহার হচ্ছে তা আইপিএসের মনিটরে দেখা যায়।

মাজহার সুলতানের তৈরিকৃত আইপিএসর বিশেষত্ব হলো এটি মাঝে মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ করলে চলতেই থাকবে। 

ওই প্রকৌশলী আরো জানান, প্রতি বছর শর্টসার্কিটের আগুনে বাসাবাড়ি ও শিল্প কারখানায় ব্যাপক পরিমাণের জানমালের ক্ষতি হয়। এ থেকে সম্পদ রক্ষার্থে তিনি হোম অটোমেশন আবিষ্কার করেছেন। বাড়িতে বা শিল্প কারখানায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হলে কমপক্ষ ৭০০ ফুট দূর থেকে বৈদ্যুতিক সুইচ অফ করা সম্ভব। চাইলে বৈদ্যুতিক বাতির আলোও বিভিন্ন রংয়ে রূপান্তর করা সম্ভব। যা হাতে থাকা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সম্ভব।

তার মতে আর্থিক সাশ্রয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সিংগেল ফেস থেকে থ্রি ফেসে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। গতি নিয়ন্ত্রণে লাগবে না বড় বড় গিয়ার বক্স। এর ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে অনেক বেশি।

টিএইচ