স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে একজন নিহত, নিখোঁজ একাধিক ও ৪ শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা প্রায় সবকয়টি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বসতি। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বন্যাদুর্গতরা। বিপৎসীমার ৯০ সে:মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি।
ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম ও পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে।ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নসহ তলিয়ে গেছে পুরো উপজেলার রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি।কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চালেও ছুঁয়েছে বন্যার পানি। এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয় খুঁজছেন স্থানীয়রা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,গত মাসের মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে ভেঙ্গে গিয়েছিল।এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন জেলার ফুলগাজী-পরশুরামের অধিকাংশ মানুষ। সেসব স্থান মেরামতের পর চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরও ১২ স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।ওইসময় প্লাবিত হয় শতাধিক গ্রাম। অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মৎস্যে ক্ষতি ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যায়।গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় আবার দেখা দিল বন্যা।
বুধবার(২১ আগস্ট) পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা এ প্রতিবেদককে জানান,স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এ বন্যায় স্থানীয় পৌরসভা ও উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে,পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ।দিনের প্রথম প্রহর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দুইটা ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।এরমধ্যে একজন লোক নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের মাঝে ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ ও আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০ টন চাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূইয়া জানান,স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এ বন্যায় উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ।মঙ্গলবার(২১ আগস্ট) থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দুইটা ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ ও আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৮ টন চাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।ভারী বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মুনীর হোসেন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযান এবং ত্রাণ সহায়তা নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
টিএইচ