মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় আবার বন্যার পানির তীব্র স্রোতের পাশাপাশি কয়েকদিনের টানা বর্ষণে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নদী তীরবর্তী পানি প্রবেশ করেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
এতে করে বর্ষা মৌসুমে নদীর তীর উপচে পানির তীব্র স্রোতে আবার দেখা দিয়েছে পদ্মার ভাঙন। উপজেলা হারুকান্দী এলাকায় প্রবল স্রোতে নদী তীরবর্তীতে লালন সাঁইজির ভক্তদের মিলনমেলার গুরুকুল আশ্রমের ঘরসহ দুটি বসতভিটা, ঘর ও আসবাবপত্র পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।
গত রোববার এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হারুকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন।
জানা যায়, উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে পদ্মার তীরবর্তীতে অবস্থিত লালন সাঁইজির ভক্তদের মিলনমেলার আশ্রয়স্থল গুরুকুল আশ্রমের ঘরসহ বসতভিটার অর্ধাংশ ও একই গ্রামের মো. চুন্নু মিয়া এবং মো. নান্নু মিয়ার বসতবাড়ির অর্ধাংশসহ দুটি ছাপরা ঘর ও আসবাবপত্র পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ঘরসহ আসবাবপত্রের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হারুকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন।
তিনি বলেন, আশ্রমের ঘরসহ দুটি বাড়ি ও ঘর পদ্মায় ভেঙে গেছে। চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থা অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছি এবং লিখিতভাবেও আবেদন করব। যেন দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করা যায়।
সোমবার (১৫ জুলাই) ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান। তিনি জানান, আমি ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে নদীর পাড় পানির নীচে অবস্থান করছে বিধায় এসময় জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করলে তা কার্যকর হবে না। কাজ করার উপযোগী হলেই আমরা আপদকালীন জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করব।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন মুঠোফোনে জানান, নদী ভাঙনের খবর পেয়ে আমার উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পাঠিয়েছি। ভাঙন কবলিত হারুকান্দি এলাকাটি নীচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বেশীরভাগ অংশে নদীর পাড় পানির নীচে অবস্থান করে। ফলে এ সময় জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করে সুফল পাওয়া যাবে না। এই মুহুর্তে পদ্মার পানি স্থিতি আছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী খুব শিগগিরই পদ্মার পানি কিছুটা হ্রাস পাবে। আমরা পর্যাপ্ত জিও-ব্যাগ মজুদ রেখেছি। বন্যার পানি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসামাত্র আমরা জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করে মেরামত কাজ বাস্তবায়ন করবো। ইতোমধ্যে আমরা আন্দারমানিক ঘাট এলাকার উজানে ও ভাটিতে জিও-ব্যাগ ডাম্পিং করেছি।
এছাড়াও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচী এলাকায় ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩৬ মিটার এলাকা আপদকালীন জিও ব্যাগের কাজ হাতে নিয়েছি। পদ্মার পানি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসলে আমরা হরিরামপুরের আরও কিছু জায়গায় মেরামত কাজ বাস্তবায়ন করবো।
উল্লেখ, প্রায় পঞ্চাশ দশকে থেকে এ উপজেলায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। এতে ১৩টি ইউনিয়নের ৯টি ইউনিয়নই ভাঙনকবলিত হয়ে হাজার হাজার বসতবাড়ি ও জমিজমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরমধ্য তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
টিএইচ