লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা পদ থাকলেও শুধু একজন ফার্মাসিস্ট দিয়েই চলছে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। হেদায়েত হোসেন নামে একজন ফার্মাসিস্ট প্রায় ১ মাস ধরে ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রেসক্রিপশন থেকে শুরু করে রোগীকে ওষুধ বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব একাই পালন করছেন।
দইখাওয়া এলাকা থেকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য রোগী দইখাওয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু প্রসূতিসেবা নিতে আসা রোগীরাসেবা পেলেও ডাক্তারের অভাবে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।
এরপরেও প্রতিদিন ৪০-৫০ জন সাধারণ রোগীকে সামাল দিতে হয় হেদায়েত হোসেন নামের ওই ফামাসিস্টকে। আইন অনুসারে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ফার্মাসিস্ট রোগীকে ওষুধ সরবরাহ করবেন। রোগীকে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম বলে দেবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বরাদ্দকৃত ওষুধ তার হেফাজতে সংরক্ষিত থাকবে।
রোগী দেখা বা রোগীর ব্যবস্থাপত্র লেখা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। কিন্তু দইষাওয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট হেদায়েত হোসেন নিজেই প্রেসক্রিপশন করেন এবং রোগীকে সেবা দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দইখাওয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা রাকিব হাসান গত মাসে বদলি নিয়ে নিজ জেলায় যোগদান করেন। ফলে গত ১ মাস ধরে ফার্মাসিস্ট হেদায়েত হোসেনকে একাই সব দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
সরেজমিন ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মাসিস্ট হেদায়েত হোসেন নিজেই একজনের পর একজন রোগী দেখছেন। দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্র এমন কি রোগীর প্রেসার মেপে রোগীকে প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবন করারও পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে হেদায়েত হোসেন নামের ওই ফার্মাসিস্ট দাবি করে বলেন, আমি এনাটমি ফিজিওলজি পড়ে এখানে এসেছি।
এর আগেও কয়েকটি বড়বড় মেডিকেলে ডিউটি করেছি সেখানেতো কোন সমস্যা হয়নি আর এটাতো গ্রাম। কর্তৃপক্ষ এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতরে এবং বাইরে (পারসোনাল চেম্বার) প্রেসক্রিপশন করার মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন।
আপনি প্রেসার মেপে রোগীকে তা নিয়ন্ত্রণের ওষুধ প্রেসক্রিপশন করে সেবনের পরামর্শ দিলেন এটা কতটুকু যৌক্তিক হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই ফার্মাসিস্ট দাবি করে বলেন, পল্লী চিকিৎসকরা তিন মাস ছয় মাস কোর্স করে যদি প্রেসক্রিপশন করতে পারেন তাহলে আমরা পারবো না কেন। তবে তিনি বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা যদি চান তাহলে আমি আর প্রেসক্রিপশন করবো না।
এ বিষয়ে গোতামারী ইউপি চেয়ারম্যান মোনাব্বেরুল হক মোনা বলেন, জনবলের সংকটে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ধুঁকছে। শুধু ফার্মাসিস্ট ছাড়া কোনো কর্মকর্তা নেই। তিনি প্রেসক্রিপশন করেন সেটি আমার জানা নেই। তবে এ ইউনিয়নের চল্লিশ হাজার মানুষসহ আশেপাশের প্রায় এক লাখ মানুষ এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে একজন ডাক্তার দেয়ার দাবি করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, ওই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাময়িক সমস্যা চলছে। শিগগিরই সেখানে একজন কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ফার্মাসিস্টকে আপাতত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তবে তিনি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে পার্সোনাল কোনো চেম্বারে প্রেসক্রিপশন করতে পারবেন না।
টিএইচ