ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বজ্র প্রতিরোধক হিসেবে তালগাছ। সরেজমিনে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও গ্রামের রাস্তাঘাট, পুকুরপাড় ও মাঠের মধ্যে সারিসারি তালগাছ ছিল। আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করত। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকত পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা গুটিকয়েক তালগাছ চোখে পড়ে। এদিকে তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় কমছে বাবুই পাখিও।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য সূত্রে জানা যায়, তালগাছ প্রায় বিলুপ্তের পথে। ফলে ঘটছে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যাও। ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ১৬৪ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছেন।
২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন ও ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছে ২৩৬ জন। ২০২১ সালে বজ্রপাতে অন্তত ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরে বজ্রপাতে গড় মৃত্যুর হার ২১৬ জনের বেশি। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে তালগাছের বিকল্প নেই। সাধারণত একটি তালগাছ ৯০ থেকে ১০০ ফুট উঁচু হয়। উঁচু গাছ হওয়ায় বজ্রপাত সরাসরি এ গাছের মাধ্যমে মাটিতে চলে যায়।
বেশ কয়েক বছর আগে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাকুড়িয়া, মিঠাপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা-আঁটি সক্রিয়ভাবে রোপণ করেন হূদয়ে আলফাডাঙ্গা নামে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন। সংগঠনের আলফাডাঙ্গার অন্যতম সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই পাশে তালের বীজ রোপণ করেছিলাম। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কারণে গাছগুলো আর বেড়ে উঠতে পারেনি।
আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের প্রভাষক মোরাদ হোসেন তালুকদার বলেন, ২০-৩০ বছর আগে এসব এলাকায় তালগাছের কদর ছিল বেশি। আমরা আমাদের এলাকায় তালের নৌকা বানাতাম। এখন আগের মতো বড় বড় তালগাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে মানুষজন তালগাছ কেটে ফেলে, কিন্তু নতুন করে কেউ আর রোপণ করে না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার সাহা বলেন, যেভাবে তালগাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে না। সামপ্রতিক সময়ে বজ্রপাতের কারণে কৃষকের প্রাণহানি ঘটছে। তালগাছ থাকলে বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে কৃষকরা রক্ষা পাবে। পাশাপাশি তালগাছ রোদে কৃষকদের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা হিসেবে কাজ করে। এ গাছ রোপণের ব্যাপারে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।
টিএইচ