ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে মুক্তিজোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন রোকেয়া বেগম নামে স্বামীপরিত্যক্তা এক নারী।
গত শনিবার ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) মনোনয়ন বাছাইয়ে তিনি এমপি প্রার্থী হিসেবে টিকে আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোয়ালমারা গ্রামের রোকেয়া বেগম। স্বামী ফারুক দীর্ঘদিন আগে দুই সন্তানসহ রোকেয়াকে ছেড়ে চলে যান।
সরকারি খাস জায়গায় ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে বৃদ্ধ মা আছিয়া খাতুন ও এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে রোকেয়ার বাস। অভাবেব সংসারে তিনি হালুয়াঘাট পৌর শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন।
কিন্তু সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ হয়ে গেলে সেখান থেকে চাকরির সুবাদে বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ডাক্তারের বাসাবাড়িতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিভিন্ন পরিচিত রোগীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। এভাবেই চলছে তার সংসার।
তবে হঠাৎ করেই তার দুলাভাইয়ের কথায় ও আর্থিক সহযোগিতায় তিনি গণমুক্তি জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। যেখানে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী কীভাবে তাকে করা হয়েছে— তার উত্তর জানেন না এলাকার সাধারণ মানুষ।
বোয়ালমারা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল মালেক বলেন, রোকেয়ার স্বামী দীর্ঘদিন আগে তাকে রেখে চলে যান। অভাবের কারণে যেখানে তার সংসার চলে না, সেখানে সে কীভাবে এমপি প্রার্থী হয়েছে— তা আমার জানা নেই। তাকে কোনোদিন রাজনীতি বা জনসেবা করতেও দেখিনি।
আরেক বাসিন্দা শহিদ মিয়া বলেন, আমার জানামতে সে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করে। সকালে বের হয়, রাতে বাসায় ফেরে। নিজের কোনো থাকার জায়গা নেই। সরকারি খাস জায়গায় ছনের ঘরে থাকে। তার মনে কীভাবে এমপি হওয়ার স্বপ্ন জাগল, তা আমি জানি না।
এ বিষয়ে গণমুক্তি জোটের মনোনীত প্রার্থী রোকেয়া বেগম বলেন, আমি আগে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে ইনসাফ ডায়াগস্টিক সেন্টারে চাকরি করতাম। বর্তমানে এখানে-সেখানে কাজ করে সংসার চালাই। গত ২৮ তারিখে আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য আমার আত্মীয় ময়মনসিংহ সদর আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম অনুরোধ করেন। আমার সব খরচ তিনিই বহন করেন। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি তো আ.লীগের কর্মী। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো সমস্যা হবে কি-না।
তখন তিনি বলেন, আমরা আ.লীগের সঙ্গেই আছি, তোমার কোনো সমস্যা নেই। পরে আমার সব কাগজপত্র তিনিই রেডি করে আমাকে প্রার্থী হতে সহযোগিতা করেন। এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে মনোনীত এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম বলেন, রোকেয়া খাতুন সম্পর্কে আমার শ্যালিকা।
আমি তাকে এমপি হওয়ার জন্য বলি এবং সব ধরনের সহযোগিতা করি। তাছাড়া গণমুক্তি জোট আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে রয়েছে। এ বিষয়ে আমি সবার সহযোগিতা চাই।
টিএইচ