বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের আলোর প্রকল্প

মহেশপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের আলোর প্রকল্প

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে কিংবা রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হয় ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে সৌর সড়কবাতি। 

বর্তমানে সেই সোলার প্যালেনের ৯০ শতাংশই এখন নষ্ট ও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অনেক জায়গায় সোলার লাইট স্থাপনের কয়েক মাসের মধ্যে তা দেখতে অনেকটা খেলনার লাইটের মত হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সোলার আছে বাতি নেই, অনেক স্থানে ল্যামপোস্ট ভেঙে পরেছে। 

নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার বা দেখভালের কথা থাকলেও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করার কারণেই আজ এগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। সড়কগুলোতে নিম্নমানের সৌর প্যালেনসহ অন্য যন্ত্রাংশ সংযোজন করে বেশিরভাগ অর্থই নিম্নমানের সোলার কোম্পানি হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সৌর বাতিগুলো না জ্বলার কারণে অন্ধকারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামীন জনপদের সাধারণ মানুষকে।

 উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানাগেছে, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীন অবকাটামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় টিআর কাবিখা ও বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে ১ হাজার সোলার বাতি স্থাপন করা হয় ২০১৬/১৭, ২০১৭/১৮ ও ২০১৮/১৯ অর্থবছরে। 

প্রতিটি সৌরবাতির জন্য খরচ হয় ৫৬ হাজার ৪৯০ টাকা। স্থাপনকালে প্রতিটি সৌর সড়কবাতির ওয়ারেন্টি দেয়া হয়েছিল ৩ বছর। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, রাস্তা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কলেজ ও প্রতিষ্ঠানের সামনে পথচারীদের সুবিধার্থে ২৫, ৩০ ও ৫০ ওয়ার্ডের এ স্টিক সোলারগুলো বসানো হয়। এসব লাইট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাগিয়ে যাওয়ার পর আর সংস্কার করা হয়নি। এদিকে সড়ক বাতিগুলো না জ্বলায় সরকারের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।  

সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌর এলাকার জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ  স্থানে বসানো ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলোর অধিকাংশ যেন এক একটি খেলনার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সৌরবাতির খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে, বাতি আছে আলো নেই। সন্ধ্যা হলে নেমে আসে ভুতুড়ে অন্ধকার। 

আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। সড়কে বসানো এ বাতিগুলো না জ্বলার ফলে বাড়ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে আলোর প্রকল্প। প্রকল্পের এমন দশাকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে মনে করছে স্থানীয়রা। 

স্বরুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের সোলার প্যানেলে গুরুত্বপূর্ণ ল্যাম্পপোস্টগুলোর অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে। লাগানোর কিছুদিন পর থেকে আর লাইটগুলো জ্বলছে না। সরকারের এত টাকার সড়কবাতি  ব্যবহারে কোন সুফল আসছে না।

এসবিকে ইউপি চেয়রম্যান আরিফান হাসান চৌধুরী নুথান জানান, আমার ইউনিয়নের কয়েকটি বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সোলার লাইট বসানো আছে। কিন্তু তার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে, এখন আর জ্বলে না শুধু খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান, সোলার প্যানেলের ওপর ময়লাপড়া ও ছায়াযুক্ত স্থানে লাইট স্থাপন করায় ব্যাটারিতে চার্জ না হওয়ায় অনেক স্ট্রিট লাইট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকায় নষ্ট হওয়ায় লাইটগুলো মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজা জানান, কম দামের সোলার প্যানেল বসালে তো নষ্ট হবেই। দাম দিয়ে কিনলেতো আর নষ্ট হতো না। আজ শুধু পৌর এলাকা না মহেশপুরের অধিকাংশো সোলার প্যানেলগুলো নষ্ট হয়ে পড়েছে। কে দেখবে বা কে মেরামত করবে আমরা তার কিছুই বলতে পারছি না।

টিএইচ