সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

‘আইনজীবীকে খুনের মাধ্যমে তারা হত্যার হোলি খেলার ফাঁদ পেতেছিল’

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আইনজীবীকে খুনের মাধ্যমে তারা হত্যার হোলি খেলার ফাঁদ পেতেছিল’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, চট্টগ্রামে আমাদের আইনজীবী ভাইকে হত্যার মাধ্যমে তারা একটি হত্যার হোলি খেলার ফাঁদ পেতেছিল, কিন্তু বাংলার জনগণ ধৈর্য এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে তাদের মুখে চুনকালি মেরে দিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, আমরা জীবন দেব কিন্তু বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়ব না। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। আমরা সমতা, ভালোবাসা, অহিংস ঐক্য সাম্যের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। এদেশে সব ধর্মের-বর্ণের মানুষ মিলেমিশে আছি। বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা সোচ্চারভাবে বলেছি বাংলাদেশে কোনো মেজরিটি এবং মাইনোরিটি মানি না। এদেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তারা সবাই এদেশের গর্বিত নাগরিক। মাইনোরিটি শব্দটি ব্যবহার করে দেশের বাইরে থেকে একটি গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।

শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভারতের কিছু হলুদ মিডিয়া যখন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে, তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা মিছিল করে তার প্রতিবাদ করেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন দেশ আমাদের সবার। আমরা ভারতের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করি না, কিন্তু তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জামায়াত আমির বলেন, দেশবাসী এখন পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছে। যারা অকাতরে জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তাদের প্রতি দোয়া এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গুম-খুন আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিডিআর বিদ্রোহের নামে পরিকল্পিতভাবে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করেছে। ষড়যন্ত্র করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ভিশন নিয়ে তারা নেমেছিল। জাতি ২০২৪ সালের গণহত্যাসহ প্রতিটি হত্যার বিচার চায়। আইনের মাধ্যমে এ বিচার অবশ্যই করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা দেশের মানুষের সেবা করার জন্য সবার সহযোগিতা চাই। এই দেশ নতুনভাবে গড়তে হবে। এই দেশ গড়তে হলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ কলঙ্কমুক্ত কিছু মানুষ দরকার। সংস্কার এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের ত্যাগ এখনও শেষ হয় নাই। আরও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। যে জাতির নেতারা ঘুমিয়ে থাকে সে জাতি যেকোনো সময় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।

জামায়াত আমির বলেন, যারা এদেশের নেতৃত্ব দিতে আসবেন, তাদের প্রতি উদাত্ত আহবান করব, হাতে লাঠি এবং বন্দুক নিয়ে মানুষকে শোষণ করার জন্য আসবেন না। পায়ে ধরে মানুষের ভোট নেবেন আর ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখিয়ে মানুষকে বুলেট দিয়ে হত্যা করবেন, সেই মানসিক তা নিয়ে আর আসবেন না। দেশের মানুষ এ ধরনের শোষণ ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন করে এ ধরনের মানসিকতা আর লালন করবেন না। আমরা দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই, মহান আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদেরকে কবুল করেন তাহলে দেশবাসীকে যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভালোবাসার পাত্র বানিয়ে দেন।

‘যারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, আমরা তাদের রক্তের ঋণ যেন শোধ করার সুযোগ পাই’—যোগ করেন জামায়াত আমির।

তিনি বলেন, দুটি ন্যায্য দাবি থেকে কুমিল্লাবাসীকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। কুমিল্লা বিভাগ এবং কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এখন মুক্ত, আমরা এবং আমাদের সহকর্মীরা যদি কোনো ভুল করি তাহলে এটা জাতির সামনে তুলে ধরেন। আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করেন। সমালোচনা না করলে আমরা ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না।

শুক্রবার দীর্ঘ ১৯ বছর পর কুমিল্লায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নগরীর কান্দিরপাড়, টমছম ব্রিজ রোড, ঝাউতলা রোড, জিলা স্কুল রোড, সার্কিট হাউজ রোড, প্রেস ক্লাব মোড়সহ নগরীর সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা নগরী। টাউন হল মাঠ ছাড়াও নারী নেতাকর্মীদের জন্য আলাদাভাবে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে প্যান্ডেল স্থাপন করা হয়।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরের আমির কাজী দীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন-জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রব, সাবেক চাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কুমিল্লা মহানগরীর নায়েবে আমির মু. মোছলেহ উদ্দিন ও একেএম এমদাদুল হক মামুনসহ জামায়াত এবং ছাত্র শিবিরের নেতারা।

টিএইচ