বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

আখের দাম না বাড়ালে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে মোবারকগঞ্জ সুগার মিল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

আখের দাম না বাড়ালে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে মোবারকগঞ্জ সুগার মিল

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে দাম না বাড়ালে আখের অভাবে কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ সুগার মিল অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে। প্রান্তিক কৃষকরা আখ চাষ বৃদ্ধি না করলে ঐতিহ্যবাহী এই মিলটি টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়বে। 

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গায় ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস লি. লোকসান আর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সার্বিক খরচ নির্বাহ করে প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে মোট ব্যয় হয় ১৮৫ টাকা, সেখানে সরকারিভাবে বিক্রিমূল্য ১০০ টাকা। 

চাষিরা আখের মূল্য পান মণপ্রতি ১৮০ টাকা। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে যা থাকে, তা খুবই নগণ্য। এই মূল্য যদি ২৫০ টাকার ওপরে হয়, তাহলে কৃষকরা আগের মতো আখ উৎপাদন করবেন এবং মিলটি লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেখানে মাত্র ৩৬ হাজার টন আখ মাড়াই হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৫৫ হাজার টন। গত অর্থবছরে মিলটিতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ঋণের সুদ বাদে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং ঋণের সুদ পরিশোধ করেছে ৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সব মিলে অর্থবছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। 

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক (অর্থ) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আখের উৎপাদন এবং মূল্য বাড়লে এই ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠা যাবে। তিনি আরও বলেন, গত অর্থবছরে ৬০ হাজার টন আখ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলে সেখানে মাত্র ৩৫ হাজার ৩৬০ টন আখ উৎপাদন হয়েছে। 

এ বছর তিন হাজার এক একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে, যাতে এ বছরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সরকারিভাবে কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা দিলে এবং আখের দাম বৃদ্ধি করলে এবং কৃষকরা আখ চাষ বাড়িয়ে দিলে এই ক্ষতি আস্তে আস্তে কমে আসতে পারে। 

বর্তমান প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা, স্থায়ী শ্রমিক ও কর্মচারী রয়েছেন ৩৬৪ জন, তাছাড়া মৌসুমি শ্রমিক ৩৪১ এবং ৪৪ জন চুক্তিভিত্তিক খণ্ডকালীন শ্রমিক রয়েছেন। কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন দিতে হয় এক কোটি ৪৩ লাখ থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই খরচ নির্বাহ করে প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে গেলে আখের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। 

বর্তমানে কৃষকরা ঈ-৩৭, ঈ-৩৪, ঈ-১৬ ও ২৬ এবং বিএসআরআই-৪৬, ৪৫ জাতের আখ বেশি উৎপাদন হয় বলে মিলটির উৎপাদন ও বিপণন বিভাগ জানিয়েছে। 

মিলের অব্যাহত লোকসান প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে দাম বৃদ্ধি করলে কৃষক আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে। তখন বেশি বেশি আখ পাওয়া যাবে; ফলে উৎপাদন খরচ কম হবে এবং লোকসান আস্তে আস্তে কমে আসবে। তাছাড়াও লোকসান কমাতে হলে সরকারকে আখ চাষে ভর্তুকি এবং আখের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

স্থানীয় কৃষক, কর্মচারী এবং শ্রমিকরা জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই বৃহৎ চিনিশিল্পের ওপর ৪-৫ লাখ মানুষের রুটি-রুজি নির্ভর করে। তারা এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

টিএইচ