সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫
ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Post

আবারও আকাশে উড়লো তরুণ উদ্ভাবক জুলহাসের বিমান

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

আবারও আকাশে উড়লো তরুণ উদ্ভাবক জুলহাসের বিমান

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনার চরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান উড্ডয়নের চার দিন পর আবারও আকাশের উড়লো তরুণ উদ্ভাবক জুলহাসের তৈরি করা বিমান।

সকাল থেকে উপজেলার জাফরগঞ্জের চরে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষজন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। বিমান উড়ানো দেখার জন্য যমুনার চরে আসা এসব দর্শনার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে।

রোববার (০৯ মার্চ) যমুনা নদীর বালুচরে জুলহাসের তৈরি আরসি বিমানটি উড্ডয়ন করে। এসময় সকাল থেকেই জুলহাসের বিমানটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করেন।

এ সময় বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট  ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিমান উড্ডয়নের আগে হেলিকপ্টার নিয়ে যমুনার চরে অবতরণ করেন তিনি। এর পর আলোচনা সভায় যোগ দেন।

জানা গেছে, তরুণ জুলহাস মোল্লার (২৮) বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের ষাইটঘর তেওতা গ্রামে। জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লার গ্রামের বাড়ি ছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায়। নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে শিবালয় উপজেলার ষাইটঘর তেওতা এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করছেন। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম। উপজেলার জিয়ন পুরের বিকেএস  উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তবে অর্থাভাবে আর পড়তে পারেননি।

পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান জুলহাস ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। অবসরে তিনি এই উড়োজাহাজ তৈরি করেন। গত ৪ মার্চ উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনা নদীর চরে নিজের তৈরি উড়োজাহাজটি আকাশে সফলভাবে উড্ডয়ন করেন। ওই দিন জেলা প্রশাসক তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেন।

এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জুলহাসের জন্য আর্থিক সহযোগিতার জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠান। আজকে বঙ্গটেক নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয় জুলহাসকে।

টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে জুলহাসের বিমান উড়ানো দেখতে এসেছেন লোকমান রহমান। তিনি বলেন, ছেলে রোরহানকে নিয়ে জুলহাসের বিমান দেখতে এসেছি। ছেলে বোরহানের বয়স আট বছর। টিভিতে বিমানটি দেখার পর বায়না ধরেছে বিমানটি সামনে থেকে দেখবে। বিমানটি আবারো উড়ানো হবে এ খবর পাওয়ার পর ছেলের আবদার পূরণ করতে সকাল বেলা ছুটে এসেছি যমুনার পাড়ে। বিমানটি সামনে থেকে দেখতে পেরে আমার ছেলে বোরহান খুবই খুশি।

জুলহাস মোল্লা বলেন, তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে উড়োজাহাজটি তৈরি করতে। অ্যালুমিনিয়াম ও লোহা দিয়ে বিমানটির অবকাঠামো তৈরি। পানির পাম্পের ‘সেভেন হর্স পাওয়ারের’ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। চার বছর চেষ্টার পরে আজকে আমি সফল হয়েছি। বিমানটি তৈরি করতে আমার এই চার বছরে সাত থেকে আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে শুধু বিমান তৈরিতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এই উড়োজাহাজ মূলত পরীক্ষামূলকভাবে প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এটি তৈরি করা হয়নি। তবে সরকারি অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে এটি তৈরি করা যেতে পারে। ৫০ ফুট ওপরে উড়তে পারে উড়োজাহাজটি।

বাংলাদেশ বিমানের অবসরপ্রাপ্ত পাইলট  ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, জুলহাসের বিমানটি তৈরিতে যে গবেষণা হয়েছে তা কিভাবে আরও উন্নয়ন ঘটানো যায় সে বিষয়ে সবাই কাজ করবো। সেই সাথে তার একাডেমিক যেসব রিসোর্স ও কারিগরি সহযোগিতা প্রয়োজন সে বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

টিএইচ