শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

আশাশুনিতে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট

আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

আশাশুনিতে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি, কুল্যা ও শ্রীউলা ইউনিয়নে অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারের ২০ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িতে বসবাসের উপযোগি না হওয়ায় বাড়ি ছেড়েছেন কয়েকশ পরিবার। ভেসে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির মৎস্য ঘের। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট। একেবারেই ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। 

এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগ। এলাকার মানুষ প্রায় দেড় মাস পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। মানুষ কোন রকমে কষ্ট করে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে টিনের উপর অথবা ছাদের উপর রান্না করে একবেলা খেয়ে দুই বেলা উপোস করে দিন পার করছে। 

দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা গেলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ডবাসীর পক্ষ থেকে এলাকার বলুয়া জলমহলসহ বিভিন্ন জলহমহল উন্মুক্তের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও আশাশুনি ইউএনও বরাবর আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা সদর  থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কাদাকাটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কাদাকাটি উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়া, যদুয়ারডাঙ্গা, পূর্ব কাদাকাটি, টেংরাখালী, তালবাড়ীয়া বলাবাড়িয়া, মোকামখালী, মিত্র তেতুলিয়া, শ্রীরামকাটি, ঝিকরাসহ ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। 

এছাড়াও একই অবস্থায় রয়েছে কুল্যা ইউনিয়নের আগরদাড়ি, দাদপুর, মহিষাডাঙ্গা, হামকুড়া, গোবিন্দপুরসহ কয়েকটি গ্রাম ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের যতদূর চোখ যায় চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। মানুষ নিরুপায় হয়ে কোন রকমে ভেলা ও নৌকায় করে চলাচল করছে। অনেকে নিচু এলাকা থেকে একটু উচু জায়গায় এসে বসবাস করছে। কেউ কেউ আবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। 

কাদাকাটি গ্রামের রমজান আলী বলেন, পার্শ্ববর্তী তালা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার পানি আমাদের এ ইউনিয়নের উপর দিয়ে বেতনা নদীতে নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারীর জন্য আমাদের এই পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আমরা প্রায় দেড় মাস পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও কেউ এদিকে আসে না, কেউ আমাদের খবর নেয় না। আমাদের এলাকার মানুষ চরম খাদ্য ও সুপেয় পানি সংকটে ভুগছে। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, এলাকার কিছু প্রভাবশালী খালগুলো নেটপাটা দিয়ে দখল করে রেখেছে, যে কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি দ্রুত নেট পাঠা অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার দাবি জানান। কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার সরকার দীপ বলেন, ইউনিয়নের নয়টা ওয়ার্ডের সবগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সুপেয় পানি, সেনিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। 

হাজার হাজার বিঘা মৎস্যঘের তলিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাল উন্মুক্ত, স্লুইসগেট দ্রুত সংস্কার এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।  ইউএনও কৃষ্ণা রায় বলেন, আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কোন পথই পাচ্ছি না। কীভাবে পানি নিষ্কাশন করা যায় এ বিষয়ে যদি আপনাদের কাছে কোন তথ্য থাকে আমাকে বললে আমরা সেভাবে চেষ্টা করতে পারি।

টিএইচ