বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

এক সপ্তাহেও স্বাভাবিক হয়নি সাতকানিয়ার বন্যা পরিস্থিতি

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

এক সপ্তাহেও স্বাভাবিক হয়নি সাতকানিয়ার বন্যা পরিস্থিতি
  • রেললাইনকে বন্যার প্রধান কারন বলছেন স্থানীয়রা
  • এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১০
  • শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা 
  • গৃহহীন কয়েক হাজার পরিবার

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া বন্যার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। 

পানি কমে গেলেও নিজ বাড়িতে আশ্রয় নিশ্চিত করতে না পারায় এখনো দূর্বিষহ জীবন পার করছেন লাখো মানুষ। প্রবীণরা বলছেন, বিগত শত বছরেও সাতকানিয়ায় এমন বন্যা দেখেননি তারা।

সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে রেললাইন। ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। তবে এই উন্নয়ন এখন জনগণের ভেগান্তির অন্যতম কারন বলছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি, রেললাইনের কারনেই ভয়াবহ বন্যার শিকার সাতকানিয়া। 

কেওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, এবারের মত ভয়াবহ বন্যা না হলেও প্রতিবছর এখানকার মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। রেললাইনের কারণে এখনো কেওচিয়ায় পানি জমে আছে। অনেক জায়গায় এখনো হাটু পানি। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন খুব করে বলেছি যেন, রেললাইনে কয়েকটি সেতু বা অতিরিক্ত কালভার্ট নির্মান করা হয়। কিন্ত কে শুনে কার কথা! 

এদিকে ১১ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়ার কেওচিয়া ইউনিয়নে  দূর্যোগ চলাকালীন মানবিক ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এমপি। এসময় জনগণের অভিযোগ নতুন রেলপথ নির্মাণে বন্যা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। 

এজন্য নতুন করে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী  বলেন, যে কেউ বললেই নতুনভাবে সব কিছু করা যায় না। যদি রেলপথ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত টেকনিক্যাল পারসনরা প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। 

সাতকানিয়ার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার কোনটিই রক্ষা পায়নি সাম্প্রতিক বন্যা থেকে। প্রতিটি জায়গায় হাটু পানি থেকে গলা পর্যন্ত পানি উঠেছে এবারের বন্যায়। তবে বন্যা পরবর্তী এখন সব জায়গায় পানি সরে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বিশেষ করে উপজেলার কেওচিয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইশ, নলুয়া, চরতী, বাজালিয়া, ছদাহা, সোনাকানিয়া, খাগরিয়া, পুরানগড়, ধর্মপুর ও পৌরসভার কিছু নিম্নাঞ্চলে মানুষ এখনো নিজ বাড়িতে বসবাস নিশ্চিত করতে পারেনি। 

ছদাহা ইউনিয়নের বাসিন্দা  মনজুর আলম বলেন, বন্যায় বাড়ির ভিতরে গলা সমান পানি হয়েছিল। ফলে আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িকে বসবাসের উপযোগী করতে অন্তত আরো ১৫ দিন সময় লাগবে। এভাবে সমগ্র উপজেলার অগণিত পরিবার এখনো অন্যত্র আশ্রিত আছেন।

সাম্প্রতিক বন্যায় সাতকানিয়ায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১০ জন। এবারের বন্যায় সরকারি অবকাঠামোর পাশাপাশি বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন স্টেশনে দোকানের ভিতর পানি ঢোকে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তাদের। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ঘরে পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহহীন হয়েছেন অন্তত কয়েক হাজার পরিবার। 

প্রাথমিক তথ্যমতে এবারের বন্যায় সাতকানিয়ায় অন্তত ১৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়িরা বলছেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়াও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সরকারের মেগা প্রকল্প খ্যাত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের। 

তবে যাদের ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তাদেরকে নতুন করে টিনশেড দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এমপি। 

এবারের বন্যায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দী ছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। তাদের মাঝে প্রথমদিকে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণ সহায়তার কথা বলেছেন অনেকেই। তবে পানি কমার সাথে ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় নেতারা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন বন্যার্তদের মাঝে। এছাড়াও প্রথম দিকে বন্যার্তদের দিকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ আবু রেজা মো. নিজামুদ্দিন নদভী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আ.লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি, বিএনপি নেতা মুজিব চেয়ারম্যান, আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুফতি শায়েক মুফতি  আহমদুল্লাহসহ অনেকেই।

টিএইচ