শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

এক সময়ের আর্শীবাদ তিস্তার পানি এখন অভিশাপ!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

এক সময়ের আর্শীবাদ তিস্তার পানি এখন অভিশাপ!

যে তিস্তা নদীর পানি এক সময় আর্শীবাদ ছিল তা এখন অভিশাপে পরিনত হয়েছে। প্রায় তিন যুগ ধরে ভারতের সাথে পানি বন্টন চুক্তি না হওয়ায় তিস্তার পানি উত্তরের পাঁচ জেলার জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। হুমকীর মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।

শুকনো মৌসুমে পানির অভাব আর বর্ষাকালে ফুলে ফেঁপে ওঠা তিস্তার জ্বল বিষিয়ে তুলেছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনকে। ভারত সরকারের গড়িমসি থেকে বাঁচতে তিস্তা নদীর পানি বন্টনে ন্যায্য হিস্যার দাবি জানিয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাশিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী। ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তানদীর অববাহিকায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। চাষাবাদকৃত ফসলের মধ্যে ভুট্টা, মরিচ, কুমড়া, বাদাম, গম, তিশি, সূর্য্যমূখী ও পাট চাষ উল্লেখ্যযোগ্য। কিন্তু এসব ফসল ফলাতে কৃষকদের কষ্টের অন্ত নেই। শুস্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকা, আর বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের।

সরেজমিন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পাড় ঘেঁষা দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সাথে। আঙ্গুর মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ভারত থেকে অসময়ে যে পানিটা আসে এটা আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে যেমন চিনা, কাউন, বোরো ও ভুট্টার আবাদ তলিয়ে যায়। যেটা আমাদের মত কৃষকদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। 

নুরুন্নবী মিয়া নামে আরেক কৃষক জানান, আমরা তিস্তা নদীর ডানপাড় এলাকার মানুষ। আমাদের প্রায় সবার জমাজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কারণ যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয় না তখন ভারত পানি দিয়ে আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। আমাদের মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।

নদী নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থার উন্নয়ন সংগঠক সাদ্দাম হোসেন পবন বলেন, যখন সেচে পানি দরকার তখন ভারত সরকার পানি দেয় না। আবার যখন পানির প্রয়োজন নাই তখন ভারত সরকার পানি দিচ্ছে। এটা একটা বড় সমস্যা। তারা বাঁধ নির্মাণ করে পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এর ফলে আমাদের এই অঞ্চলে অসময়ে বন্যা হয়। ফসলের ক্ষতি হয়। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করা। পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা। তাহলে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পাবে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখের শেষ নেই। শুকনো মৌসুমে যখন এই অঞ্চলে পানি দরকার তখন ভারত সরকার পানি দেয় না ফলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। যখন বর্ষা মৌসুম তখন তারা পানি ছেড়ে দেয় ফলে এই অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। হাজার হাজার ফসলি জমি পানিতে ডুবে যায়। মোট কথা ভারত সরকার তিস্তা ইস্যু নিয়ে এক প্রকার বিরুপ আচরণ করে এই অঞ্চলের মানুষের সাথে।

টিএইচ