সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের মার্জান গ্রামের ৫ বছর বয়সী শিশু ফাতেমার কানের ১ আনা ওজনের কানের দুল কেড়ে নিতেই হত্যা করেছে প্রতিবেশি মামা নজরুল ইসলাম।
এ তথ্য জানিয়ে শুক্রবার (৪ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান জানান, গত ৩১ জুলাই ফাতেমাকে (৫) কুসর (আখ) খেতে দিবে বলে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশি নজরুল।
এর ঘণ্টাখানেক পর নজরুল শরীরের কাপড়-চোপড় ভেজা অবস্থায় দুই খন্ড কুসর হাতে নিয়ে ফাতেমাদের বাড়িতে এসে ফাতেমার সন্ধান করে এবং বলে যে ফাতেমা তার সাথে যায় নাই। এরপর সবাই মিলে ফাতেমার সন্ধান করতে থাকে এবং এলাকায় মাইকিং করে।
এরপর গত ২ আগস্ট ছবেদ সরদারের স্ত্রী ডলি বেগম ফাতেমার বাড়িতে এসে বলে যে, শিয়ালে একটি পা নিয়ে চরার মধ্যে দিয়া যাচ্ছে। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে শাহজাদপুর থানা পুলিশ ঐদিন সন্ধ্যায় মার্জান গ্রামের রাজেম সরকারের ডেমা ঘাসের ক্ষেত থেকে ফাতেমার অর্ধগলিত পচা, হাড়, মাংশ বাহির হওয়া, ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় মৃত ফাতেমার মা মোছা. নুরজাহান (৩০) শাহজাদপুর থানায় ৩ আগস্ট এজাহার দায়ের করেন।
মামলার পর ঐদিন রাতেই সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডলের দিক নির্দেশনায় এবং শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ও শাহজাদপুর থানার ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে শাহজাদপুর থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন মো. আবু সাঈদ ও এসআই শারফুল ইসলামের নেতৃত্ত্বে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি টিম উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের ইসলামপুর ডায়া মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. নজরুল ইসলামকে (২৫) আটক করে। নজরুল গালা ইউনিয়নের মার্জান গ্রামের মো. আবেদ আলীর পুত্র।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছে, সে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। ৪/৫ বছর পূর্বে সে তার নিজ গ্রাম থেকে চলে এসে বাদীর বাড়ির কাছে জমি কিনে বাড়ি করে। সে দুইটি বিয়ে করেছিল এবং তার দুই স্ত্রীই তাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। সে শিশু মোছা. ফাতেমাকে মাঝেমধ্যে সদাই (ছোট বাচ্চাদের লোভনীয় খাবার) কিনে দিত।
সেই কারণে প্রায়ই শিশু ফাতেমা আসামি নজরুলর বাড়িতে যাইতো এবং ফাতেমা তাকে মামা ডাকত। সে ১০/১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি আসে এবং সুনির্দিষ্ট কোন পেশা না থাকায় সে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সে শিশু ফাতেমার কানে স্বর্ণের দুল দেখে তা নেয়ার পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সে গত ৩১ জুলাই ফাতেমাকে ঘাসের ক্ষেতে নিয়ে যায়। এরপর সে ভয় দেখিয়ে তার কানের দুল খুলে নেয়। এসময় শিশু ফাতেমা চিৎকার দিলে সে গলা চেপে ধরে শিশু ফাতেমাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে বাসায় আসে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে।
টিএইচ