বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

কাপ্তাইয়ে নতুন কফির জাত উদ্ভাবনে কৃষিতে আনবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি

কাপ্তাইয়ে নতুন কফির জাত উদ্ভাবনে কৃষিতে আনবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই গবেষণা কেন্দ্র অদ্যবদি পাহাড়ের কৃষিতে নতুন নতুন ফলের জাত উদ্ভাবন করে সফলতা নিয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত প্রায় বিভিন্ন ফলের ১৯টি জাত উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছে। তবে এবার কফির নতুন দুটি জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাহাড়ের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ ৫ বছর গবেষণা চালিয়ে অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা নামের দুটি কফির উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন তারা। যার মধ্যে অ্যারাবিকা জাতের কফিটি বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত। তবে তাদের উদ্ভাবিত জাতের নাম দেয়া হয়েছে বারি কফি-১ এবং বারি কফি-২। এছাড়া আগামী দুই বছরের পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষাবাদের আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ওই গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, নতুন উদ্ভাবনকৃত কফির জাতটির বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। তৎমধ্যে পাহাড়ী অঞ্চলের যেকোন এলাকায় ছাঁয়াযুক্ত স্থানে এর আবাদ করা সম্ভব। ফলে এটি বিভিন্ন বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করার সুযোগ রয়েছে। 

এছাড়া কফি চাষ শুরু করার তিন থেকে চার বছর পর গাছে ফল আসা শুরু হয়ে যায়। এবং প্রতিটি গাছ থেকে ৪ থেকে ৫ কেজি কফি ফল পাওয়া সম্ভব। সে হিসাবে বাগানে প্রতি হেক্টরে ৭ থেকে ৮ মেট্রিক টন কফি ফল উৎপাদন সম্ভব হবে। এছাড়া কফি সাথী ফসল হওয়াতে আলাদা খরচ কিংবা পরিচর্যার তেমন প্রয়োজন হয় না। 

কফির চাষ অনেকটা সহজ হওয়ায় এটি চাষে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ বাড়ছে বলে তিনি জানান। এছাড়া ইতোমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় অনেক চাষী কফি চাষ শুরু করে দিয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

কফি চাষে জড়িত স্থানীয় কয়েকজন চাষীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অনেকটা কম খরচে এবং ঝামেলা ছাড়া কফি চাষ শুরু করা সম্ভব। এবং অল্প সময়ে ফলনটা ভালো আসে। এছাড়া কয়েকজন চাষী বাগানে প্রায় কফির দুশত পর্যন্ত চারা লাগিয়েছে। বিশেষ করে এই কফি চাষ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গার প্রয়োজন হয় না। যেকোন বাগানে সাথী ফসল হিসেবে লাগানো যায়। অন্য গাছের ছাঁয়া পেলেই এই কফি চাষের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই চাষীরা আশা করছেন, কফি চাষের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

এদিকে কফির এই নতুন জাতের উদ্ভাবনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তাই রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নিজাম উদ্দীন জানান, বিশ্বসেরা অ্যারাবিকা জাতের এই কফি যেহেতু আমরা পাহাড়ী এলাকায় আবাদ করে সফলতা পেয়েছি তাই আমরা এটি মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। আমরা আশা করছি আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পাহাড়ের প্রত্যেকটা স্থানে এই কফির আবাদ শুরু করতে পারবো। এছাড়া বাংলাদেশে কফির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং বিশ্বে কফি একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। তাই পাহাড়ে কফি চাষের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি অঞ্চলের কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, কফি চাষ করার পদ্ধতিটা যেমন সহজ তেমনি এই কফি পরিবহন করাও সহজ এবং কফি সংরক্ষণের ও সুবিধা রয়েছে। তাই আশা করা যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ বাড়ানো গেলে সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে।

টিএইচ