সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
The Daily Post

কাশিমপুরে ফুটপাতে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে ব্যবহার দুর্ঘটনার আশঙ্কা

কাশিমপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

কাশিমপুরে ফুটপাতে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে ব্যবহার দুর্ঘটনার আশঙ্কা

দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না তবুও। বরং কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই কাশিমপুর এলাকার ফুটপাতের উপর গ্যাস সিলিন্ডার রেখে হোটেল রেস্টুরেন্টের খাবার রান্না করছেন ব্যবসায়ীরা। 

বিশেষ করে বিকেলে পুরি, সিঙ্গারা, সমচা, মোগলাইসহ বিভিন্ন পণ্য ফুটপাতে সিলিন্ডার রেখে ভাজাটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরজমিনে কাশিমপুরজুড়েই দেখা গেছে এমন চিত্র। দেখা যায়, সিলিন্ডারের পাশেই রাখা হচ্ছে গ্যাসের চুলা।

এ কারণে বিস্ফোরণের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যেকোনো সময়েই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এতে যেমন ঝুঁকিতে রয়েছে দোকানি, কারিগর তেমনি ফুটপাতে চলাচলকারী সাধারণ নাগরিকরা। 

কাশিমপুরের জিতারমোড়,নামা বাজার,মোল্লা মার্কেট, বারেন্ডা, কাজীমার্কেট, হাতিমারা, ডিবিএল গেট, সুলতান মার্কেট, হাজীমার্কেট, মাদারগেট, লতিফপুর, মোজারমিল, চক্রবতী, ভবানীপুর, পানিশাইল, জিরানী বাজারসহ কাশিমপুরজুড়েই সরজমিনে ঘুরে মিলেছে এমন চিত্র। ফুটপাতে রাখা এসব সিলিন্ডার দিয়ে ব্যবহার করছে হোটেল মালিকরা।

জিরানি বাজার এলাকায় এইচ এইচ মার্ট মেগা শপ এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক বলেন, এধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা আমাদের এখানে কখনো ঘটেনি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই কাজ করছি। এতে তো অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে। যদি আগুন লেগে যায় তাহলে আপনাদের অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমাদের আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। এর আগে কেউ বলেনি। তবে কথা দিচ্ছি-এভাবে আর সিলিন্ডার চুলা কাছাকাছি রাখব না। চুলা থেকে সিলিন্ডার দূরে সরিয়ে রাখব।

সুলতান মার্কেট ডানা রোড এলাকায় নুর জাহান হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে দেখা যায়, দোকানের চুলা থেকে সিলিন্ডার এক ফুটেরও কম দূরত্বে রেখে তেলে ভাজা খাবার ভাজছেন বেশিরভাগ দোকানীরা। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও এসব হোটেলের সামনে সিলিন্ডার রেখে বিভিন্ন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে স্কুলগামী শিশুরাও। 

সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯ সালে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে ৮১৮টি। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। আহত হয়েছেন ৬৯ জন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১২ কোটি টাকার উপরে। কারণ এসব অগ্নিকাণ্ডের অনেকেই স্থানীয়রা নির্বাপণ করেন। 

বড় ধরনের ঘটনা না ঘটলে ফায়ার সার্ভিসকে কল করা হয় না। আর যেসব অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসকে ডাকা হয় না সেসব ঘটনা ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে নেই। গড় হিসেবে দেখা যায়, প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও একাধিক সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই দুর্ঘটনাগুলো মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে ঘটে। সিলিন্ডারের হোস-পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস বাল্ববের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিকেজ হয়। এরপর ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা। এছাড়াও অনেকে চুলার পাশে গ্যাস সিলিন্ডার রাখায় অতিরিক্ত তাপে সিলিন্ডার গরম হয়েও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এবিষয়ে মর্ডান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ তাশারুফ হোসেন বলেন, এটা তো অবশ্যই ঝুঁকির। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যেমন ঝুঁকিতে রয়েছে, সেই সঙ্গে ফুটপাতে চলাচলকারী পথচারী আমরা সার্বক্ষণিক তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। 

এক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের কিছু করণীয় রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটি তো করবে জ্বালানি ও বিক্ষোরক অধিদপ্তর। তবে আমরা যখন মহড়া করি তখন আমাদের চোখের সামনে পড়লে আমরা তাদের সতর্ক করি, পরামর্শ দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আসলে এর চেয়ে বেশি কিছু আমাদের করার নেই। 

টিএইচ