শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন উম্মোচিত হলো মানবসেবার দ্বার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি  

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন উম্মোচিত হলো মানবসেবার দ্বার

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের দীর্ঘ ১০ বছর পর  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। 

ভার্চুয়ালি সভায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক কুষ্টিয়া ৩ আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফসহ কুষ্টিয়ার ৩জন এমপি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, প্রকল্প পরিচালক, জেলা আ.লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা। 

২০২১ সালের জানুয়ারিতে একনেক বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশের পর প্রায় ৩ বছর পর চালু হলো কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 

এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মানের তিন দফা সময় বাড়ানো হয়। এরপরও নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে চালু হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১০ তলা ফাউন্ডেশনের ৫শ শষ্যা হাসপাতালের ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। যে কারণেই হাসপাতালের আংশিক সেবা এখন থেকেই পাওয়া যাবে। কয়েক দিন পর পরিপূর্ণ সেবা পাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একনেক সভায় এই প্রকল্পের সংশোধিত ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সর্বশেষ বর্ধিত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এর আগে প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ ও তা অনুমোদনের পর অর্থ বরাদ্দ বিলম্বের  কারণে  ২০২১ থেকে নভেম্বর থেকে পুরো এক বছর বন্ধ ছিল প্রকল্পের কাজ। 

এছাড়া অনিয়ম বহির্ভূত প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তনে অডিট আপত্তিসহ অন্য জটিলতা কাটিয়ে প্রশাসনিক আদেশ পেতে আরো এক বছর ঝুলে ছিল প্রকল্পটি। পরবর্তীতে জটিলতা নিষ্পত্তির পর প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। বর্ধিত সর্বশেষ সময়সীমা চলতি বছরের ৩০ জুন অতিক্রমের পর ফের ছয় মাস সময় চেয়ে তা অনুমোদনে সরকারের উচ্চ মহলে চলে দেন-দরবার। ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শিরিন আখতার স্বাক্ষরিত পত্রে সুপারিশ করা হয়। 

উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১১ সালে স্থাপিত মেডিকেল কলেজটি অস্থায়ী ভবন থেকে স্থানান্তরের পর ২০২২ সালের ৩ মার্চ মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক-প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হয়। কিন্তু হাসপাতাল ভবনের ডিপিপি সংশোধন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-গাফিলতি ও তদারকি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের উদাসীনতায় বার বার সময় বাড়িয়েও বাস্তবায়ন হয়নি প্রকল্পটি। 

ছয়টি ব্লকে বিভক্ত বৃহদায়তনের হাসপাতাল ভবনটি এখন দৃশ্যমান হলেও ১৯টি লিফট স্থাপনসহ বিদ্যুৎ, পানির রিজার্ভ ট্যাংক, মেডিকেল গ্যাস প্লান্ট, সেন্ট্রাল এসি ও জরুরি বিভাগের সামনে পাকাসড়ক নির্মাণসহ আনুসাঙ্গিক কাজ কিছু কিছু এখনো অসমাপ্ত। এছাড়া পরিপূর্ণভাবে ভবন হস্তান্তর না হওয়ায় ওয়ার্ড-কেবিনের বেড ও ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ-আইসিই্উ, অর্থোপেডিক, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলোজি, গাইনী, চক্ষু ও নাক,কান-গলাসহ অন্য বিভাগের জন্য আমদানি এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসাউন্ড ও এক্স-রে মেশিনসহ বিদেশ থেকে আমদানি চাহিদার ৬০ ভাগ কোটি কোটি টাকার যন্ত্র-মেডিকেল সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ একে বারেই শেষের দিকে। ৬৮২ কোটি টাকার প্রকল্পটির মধ্যে ৪,৮৫ কোটি টাকায় একাডেমিক ভবন, ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল ও ডরমেটরিসহ অন্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করে হাসপাতালটি এখনো চালুর উপযোগী করে তোলা হয়েছে। 

প্রকল্পটি তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, অর্থ সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ আরো ছয় মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। আমরা আউটডোরে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। 

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডাক্তার চৌধুরী সারওয়ার জাহান জানান, নির্ধারিত সময়ে ভবন হস্তান্তর না হওয়ায় হাসপাতাল চালুতে বিলম্ব হয়েছে। বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর ৫শ শষ্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল চালু করা হবে। তবে আউটডোর সার্ভিস চালু করা হয়েছে। 

টিএইচ